দৈনিক তালাশ.কমঃ আগামী ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। ইতিমধ্যেই সম্মেলনকে ঘিরে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারী নাসিক নির্বাচন চলাকালে হুট করেই বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা ও মহানগর কমিটি সহ সকল ইউনিট কমিটির। এরপর থেকেই নতুন কমিটি গঠন করা নিয়ে শুরু হয় সকল জলপনা কল্পনা। নতুন কমিটিতে ঠাই পেতে পদ প্রত্যাশীরা নিজ বলয়ের নেতাদের আশীর্বাদ পেতে উঠেপরে লাগে। দৌড়ঝাপ শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত। আট দিন পর খানপুর মেইন রোডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনে জেলা কমিটির চেয়ে বেশি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা।
জানা গেছে, মহানগর কমিটিতে সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক কমিটির সভাপতি জুয়েল হোসেন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গির হোসেনের ভাগিনা কায়কোবাদ রুবেল। তবে, সম্মেলন সিলেকশনের মাধ্যমে হোক আর নির্বাচনের মাধ্যমেই হোক সভাপতি পদটি যে জুয়েল হোসেনেরই প্রাপ্য তা অনেকটাই অনুমেয়। কারন প্রথমত জুয়েল হোসেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি এবং এর আগের কমিটির সাধারন সম্পাদকরে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথের রাজনীতি করে আসছেন। রাজনীতির মাঠে তার সাংগঠনিক দক্ষতা লক্ষনীয় এবং একজন সুবক্তা হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে তার গ্রহনযোগ্যতা।
অপরদিকে, জুয়েল হোসেনের প্রতিপক্ষ সভাপতি প্রার্থী কায়কোবাদ রুবেলের তেমন কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। মূলত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গির হোসেনের ভাগিনা বলেই তিনি রাজনৈতিক মহলে পরিচিত।
এদিকে, সাধারন সম্পাদক পদটি নিয়েই চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা। এ পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক কমিটির সাধারন সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মারুফুল ইসলাম মহসীন (সানি-সুজন কমিটির) ও জেলা যুবলীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক তাহেরউদ্দিন আহমেদ সানির নাম শোনা গেছে। তবে সাধারন সম্পাদক পদের দৌড়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছেন সানি। কারন জেলা যুবলীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক পদে আসীন থাকলেও জেলা যুবলীগের কমিটির বহুবছর যাবৎ নিষ্ক্রিয় থাকায় কাগজে কলমে পদ থাকলেও তাকে রাজনীতির মাঠে ময়দানে তেমন একটা দেখা যায়নি। মূলত তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অপর দুই প্রার্থী দুলাল-মহসীন উভয়েই এমপি শামীম ওসমানের আস্থাভাজন এবং অনুগত। উভয়েই দীর্ঘদিন যাবৎ ওসমান পরিবারের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। রাজপথে উভয়ে সক্রিয় থাকলেও দুলাল প্রধান মাদক ব্যবসা সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে ইতিমধ্যেই বেশ বিতর্কিতি হয়েছেন। তাছাড়া সাবেক কমিটিতে সাধারন সম্পাদক পদে থাকলেও সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন পুরোদমে।
অপরদিকে, মারুফুল ইসলাম মহসীন একজন ক্লীন ইমেজের রাজনীতিবিদ। সব ধরনের বিতর্কের ঊর্দ্ধে তিনি ওসমান শিবিরের রাজনীতি করে আসছেন। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করা মহসীন ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে ছিলেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের স্বর্ণযুগ অর্থাৎ ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র সহ সভাপতি পদে। এই দীর্ঘ সময় যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার পরেও মহসীন কোন ধরনের বিতর্কে জড়াননি। শুধু তাই নয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যখন এমপি শামীম সমান কানাডা থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় সমাবেশে বক্তব্য দিতেন সেসময় বিএনপি জামাতের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম ১৪নং ওয়ার্ডে জনসভার আয়োজন করেন মারুফুল ইসলাম মহসীন। সেই সমাবেশে দীর্ঘ ৪০ মিনিট মোবাইলে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষন দেন বর্তমান এমপি শামীম ওসমান।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান আগামীর যে রাজনীতির ছক একেছেন সেখানে নিজ দলের কমিটিগুলোতে বিতর্কিত কোন ব্যাক্তি যাতে স্থান না পায় এমন একটি শক্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে এখন দেখার বিষয়, রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির মহানগর শাখায় কারা আসছেন মূল দায়িত্বে।