দৈনিক তালাশ.কমঃমাদক কারবারের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট এখন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগস্থল এলাকা হওয়ায় এই দুই মহাসড়কের ৩৬টি রুটে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জে মাদকের বিপুল পরিমাণ চালান প্রবেশ করছে। এসব মাদকের চালানের মধ্যে রয়েছে মধ্যে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। তবে ফেনসিডিলের চেয়ে এখন সবচেয়ে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মরণনেশা ইয়াবা। এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে ইয়াবার কারবার না হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে পুলিশের সাথে সখ্যতা তৈরী করে পুলিশের সোর্সরাই বিভিন্ন কৌশলে পুলিশের অজান্তেই তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। এসব সোর্সদের মধ্যে আবার অনেকে নিজেরাই জড়িত রয়েছে মাদক ব্যবসায়। ফলে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সৃষ্টি হয়েছে মাদকের ভয়াবহ পরিস্থিতি। আবার সোর্সদের অনেককেই দেখা যায় গাড়িতে বিভিন্ন পেশার স্টীকার লাগিয়ে অলিগলিতে দাবড়িয়ে বেড়াতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সোর্সেরা আসামি ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। যে কারণে সোর্সরূপী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বেড়ে গেছে মাদকের ছড়াছড়ি,অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে,অপরাধী গ্রেপ্তারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকেই। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু সোর্সেরা অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করছেন।
এরা মাঝেমধ্যে বিরোধী গ্রুপের দু-চার জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখেন। এদের ছত্রছায়ায় সিদ্ধিরগঞ্জে অর্ধ্বশতাধিক মাদকের স্পট তৈরি হয়েছে।
পুলিশের সোর্সদের মধ্যে অন্যতম হলো- মাদক সম্রাট ডাকাত ইলিয়াস (২৮), টাইগার ফারুকের ভাই মাদকের শীর্ষ ডিলার জসিম (৩২) ও সোর্স তোতলা নজরুল (৩৫)। এদের সহযোগীরা হচ্ছে ভুয়া ডিবি পরিচয়ধারী অপু (৩০) ও মাদক সম্রাট আশরাফ (৩৫) এবং মাদক সম্রাট ডাকাত ইলিয়াস এর ছোট ভাই পলাশ, আল আমিন, শুভসহ আরও কয়েকজন ।
এছাড়াও আরো রয়েছে আদমজী বিহারী ক্যাম্পের তসলিম, হীরা, মৃদুল, পিচ্চি বাবু, শাহাবুদ্দিন, মান্নান প্রধান ওরফে মান্না।
বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জে সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীদের কাছে যুব-সমাজ নষ্টের মূল হোতা মাদক সম্রাট ডাকাত ইলিয়াস, সোর্স তোতলা নজরুল ও জসিম। ওরা কখনও পুলিশ, কখনও ডিবি, কখনও বা ভয়ঙ্কর অপরাধী। সংঘবদ্ধভাবে নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে তারা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় বেপরোয়া এবং ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে মাদক সম্রাট ডাকাত ইলিয়াস, জসিম ও সোর্স তোতলা নজরুল বাহিনী।
অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, অবৈধ ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি, জুয়ার স্পটসহ অসামাজিক কার্যকলাপ এবং অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ করছে ইলিয়াস, জসিম ও তোতলা নজরুল বাহিনী। তারা প্রতিটি জুয়া ও মাদকের স্পট থেকে দৈনিক মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনের নীরবতার কারণেই দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে অপরাধীদের সংখ্যা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ইলিয়াস, জসিম ও তোতলা নজরুলের শেল্টারে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড, মিজমিজি পাগলা বাড়ি, টি.সি রোড সংলগ্ন মোল্লা বাড়ির পাশে, বাতেন পাড়া, হিরাঝিল, সি.আই খোলা, মিজমিজি কেন্দ্রীয় বড় কবরস্থান রাস্তাসহ অসংখ্য স্পটে চলছে মাদক বেচাকেনা। তাদের এই মাদক কারবারে কেউ বাধা দিলে তাকে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। কখনো ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি আবার কখনো মারধরের হুমকিও দেওয়া হয়।
জানা যায়, ভুয়া ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বুক ফুলিয়ে বীরদর্পে তোতলা নজরুল তার বাহিনীর মাধ্যমে রমরমা মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালানোর আগেই সব মাদক কারাবারিদের পূর্বেই সতর্ক করে দেয় ইলিয়াস ও তোতলা নজরুল। যার ফলে অভিযান চালিয়েও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।পুলিশের একটি সূত্রে জানায়,অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে সাধারণত পুলিশের সোর্স প্রয়োজন হয়। এ জন্য পুলিশের নিয়মিত বাজেটের একটা বড় অংশ সোর্সমানি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ সোর্সমানির টাকা কখনো সোর্সদের দেওয়া হয় না। তারা এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করেই তাদের পাওনা পুষিয়ে নেন। আর এ কারণে সোর্সেরা কখনো ওই টাকা দাবিও করেন না।
অপর একটি সূত্র বলছে, সোর্সমানি না দিলেও জব্দকৃত মাদকের একটি অংশ সোর্সদের দেয়া হয়ে থাকে। পরে সোর্সরা তাদের লোক দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করে থাকে। অধিকাংশ সোর্সই মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় একাধিকবার পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক হন। এরপর থেকেই পুলিশের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে হয়ে ওঠে আরও ঘনিষ্ঠ।
আইনের ফাঁকে বেরিয়ে এসেই শুরু করে তাদের পুরোনো কর্মকান্ড, সঙ্গে যোগ করেন পুলিশের সোর্স হিসেবে বাড়তি ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাবলে নিরীহদের মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে, জমি বিক্রেতার টাকা খোয়ানোর কৌশলে ও স্থানীয় মাদকসেবীকেও মাদক বিক্রেতা সাজিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়াসহ নানা অপকর্ম চালায়। তাদের রয়েছে একাধিক জুয়ার আসরও।
অন্যদিকে প্রকৃত মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা ও হপ্তা আদায় করে নিজের ভাগেরটা রেখে অসাধু পুলিশ সদস্যদেরকে তা প্রদান করে। আর এভাবেই নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয় মাদক কারবারি।
স্থানীয়রা জানান,মাদক সম্রাট,ডাকাত ইলিয়াস ও তোতলা নজরুল সোর্স সুবাদে প্রতিটি এলাকায় নির্বিগ্নে বিভিন্ন অপরাধ অপকর্মসহ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ যদি প্রতিবাদ করে তাহলে তাদের কাছে থাকা মাদকদ্রব্য দিয়ে প্রতিবাদ কারিকে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া পাড়া-মহল্লায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল তৎপরতা কমে যাওয়ায় প্রতিটি অলিতে-গলিতেই বাড়ছে অপরাধ-অপকর্মসহ মিলছে মাদক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি মাদক নির্মুলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমাদের স্বপ্নদেখা সন্তানগুলো অচিরেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে আর ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের যুব সমাজ।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।