দৈনিক তালাশ.কমঃ ক্ষমতাসীন দলের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী দল বিএনপি।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালায় এবং নেতা-কর্মীদের আটক করে।এ ছাড়া,রাজশাহীতে পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি।
বিএনপি জানিয়েছে,এদিন বিকেলে পদযাত্রা ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় পৌঁছালে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।এতে অন্তত ১২ নেতা-কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
“শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার পর বিনা উসকানিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমসহ ২৫ নেতা-কর্মীকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ,বেনারকে বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পুলিশের হামলায় দলের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপি’র অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার আশরাফ হোসেন বেনারকে বলেন, “পদযাত্রা থেকে একটি বাস ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করায় পুলিশ বিএনপি’র ১০ জনকে আটক করেছে।
বিএনপি’র কয়েকজন নেতা-কর্মী পুলিশের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন,প্রথম দিকে রোডমার্চ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল। বিএনপি কর্মীরা তাদের মিছিল সায়েন্সল্যাব এলাকায় পৌঁছালে সহিংস হয়ে ওঠেন।”
বিএনপি নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেল আঘাতে অন্তত আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান আশরাফ হোসেন।
রাজশাহীতে বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের তালা!
বিএনপি’র অভিযোগ,রাজশাহীতে দলের পদযাত্রা কর্মসূচি ঠেকাতে সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।এক পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দেয়।
“আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকালে বিএনপি মহানগর শাখার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী,পদযাত্রার জন্য নেতা-কর্মীদের সোনা দীঘির মোড়ে জড়ো হওয়ার কথা ছিল।মঙ্গলবার সকাল থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই এলাকায় অবস্থান নেয়,বেনারকে বলেন বিএনপি রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা।
তিনি আরও বলেন,নগরীতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে “পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে তালা দেয়নি,বলে বেনারকে জানান রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাক।
তিনি বলেন,যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।কারণ আমাদের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল,বিএনপি তাদের রোডমার্চ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপ করতে পারে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘর্ষের আশঙ্কায় গত রোববার ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়“আগামী সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারির আগে বা তার মধ্যে অনুষ্ঠিত বলে আশা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এবং অন্যান্য নির্বাচন সম্পর্কিত কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আরেক মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার শুরু
সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরও একটি মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
অভিযোগ গঠনের পাশাপাশি মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা মাহবুবুল আলমের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের জানান,সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় আদালত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,খালেদা জিয়া ও এই মামলার অন্য সাত আসামি তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর কাছে হস্তান্তর করেন। এতে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনে নিম্ন আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে গত ১৭ মে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া।এই আবেদনের ওপর শুনানি নিতে আগামী ৩০ মে দিন ধার্য করেছে আদালত।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বেনারকে বলেন, “নির্ধারিত তারিখে হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি হবে।তবে বিচারিক আদালতে আইনি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে কোনো বাধা নেই।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে,খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক শাসন আমলে ১৩টি মামলা হয়।বাকি মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে।
প্রসঙ্গত, এর আগেই দুর্নীতির অভিযোগে দু’টি মামলায় খালেদা জিয়ার মোট ১৭ বছরের সাজা হয়েছে।