বিএনপির পদযাত্রায় হামলা: নামে-বেনামে আসামি দলের ৭ হাজার কর্মী

দৈনিক তালাশ.কমঃ বাংলাদেশে বিরোধী দল ও ক্ষমতা সীনদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বুধবার শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। তবে প্রথম দিনের পদযাত্রাকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রায় সাত হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ ও সরকারি দলের কর্মীরা।

সংশ্লিষ্ট থানা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত দেশের অন্তত ১২ জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাদি হয়ে ১৮টি মামলা করেছেন।
এসব মামলায় ৯২৩ বিএনপি নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে আরও ৬ হাজার ১৪৬ নেতা-কর্মীকে।
ঢাকা, বগুড়া, ফেনী, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, জয়পুরহাট, নোয়াখালী ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনের অধীনে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
এসব মামলায় বুধবার রাত পর্যন্ত বিশ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েল।
মামলা আন্দোলন দমনের হাতিয়ার: ফখরুল
দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “মামলা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের আন্দোলন থেকে সরাতে পরিকল্পিতভাবে মঙ্গলবার পদযাত্রায় হামলা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “মামলা দিয়ে আন্দোলন দমনের এই হাতিয়ার সরকারের কাছে যেমন নতুন নয়, তেমনি আমাদের নেতা-কর্মীদের জন্যও এটা নতুন নয়। চার লাখের বেশি নেতা-কর্মী মামলা মাথায় নিয়েই রাজপথে রয়েছে।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “অধিকাংশ হামলার ঘটনায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আহত হলেও শুধুমাত্র বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া থেকে সহজেই বোঝা যায় এখানে আইনের শাসনের ব্যত্যয় হয়েছে।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বেনারকে বলেন, “পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে। এখানে রাজনীতির কিছু নেই। বিএনপির রাজনীতি মানেই সহিংসতা এটা আবারো প্রমাণিত হলো।”
গত ১২ জুলাই সরকার পতনে একদফা কর্মসূচি ঘোষণার পর মঙ্গলবার ও বুধবার দেশজুড়ে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রথম কর্মসূচি শেষ করল বিএনপি। আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি শেষ করেছে।
শেষ দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “আমরা ক্ষমতায়, আমরা গোলমাল কেন করব। যত শান্তি থাকবে, আমাদের ভোট তত বাড়বে।”
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার’ আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
হিরো আলমের ওপর হামলা: ১২ দেশ ও ইইউ’র উদ্বেগ
গত সোমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোট চলাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলমের (হিরো আলম) ওপর সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ১২টি পশ্চিমা দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বুধবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহিতার দাবি জানাই।”
এতে আরও বলা হয়, “আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।”
দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোর মধ্যে রয়েছে; কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন।
দূতাবাসের বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে দূতাবাসের বিবৃতির সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দূতাবাস কোনো ঘটনা ঘটলে মিডিয়াতে বিবৃতি দেয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয় না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি বলেন, “হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। যারা নির্বাচন চায় না তারাই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *