দৈনিক তালাশ.কমঃ গত ০৮/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ০৩.৪৫ ঘটিকার দিকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিয়ানগর সাকিনস্থ রিপন হাজীর মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার উপর একটি মৃতদেহ পরে আছে।
তাৎক্ষনিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল ও অফিসার ইনচার্জ, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের একটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং পরবর্তীতে ডিসিস্টের ভাই মৃতদেহটি সনাক্ত করে। মৃতদেহের সুরতহাল করে হত্যার প্রকৃত কারন নিরূপনের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) ঢাকায় ময়না তদন্তের জন্য প্রেরন করেন। পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত ০৮/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে ডিসিষ্টের ভাই কালু মাতবর (৪০) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা নং-২০, তাং- ০৮/০৭/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৪/৩০২/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করে।চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের শুরু থেকেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান, পিপিএম-বার, পুলিশ সুপার ঢাকা মহোদয় তাৎক্ষনিক নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ অ্যান্ড ট্রাফিক-দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) খালেদুর রহমান ও অলক কুমার দে সহ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার একটি চৌকষ তদন্ত টিম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক তদন্ত কার্য়ক্রম শুরু করে। তারপর তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ব্যাপক পর্যালোচনা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার এক পর্যায়ে দেখা যায় ডিসিষ্ট নয়নের অটোরিক্সাতে আরো ০৩ জন অজ্ঞাতনামা লোক ছিল। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে অটো ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য সন্দেহে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়। তবে মৃত ব্যক্তির পিসি/পিআর পর্যালোচনায় দেখা যায় তার নামে দুটি মাদক মামলা আছে। তাছাড়াও মৃত ব্যক্তির শরীরে অসংখ্য দাড়ালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখে হত্যার কারন হিসেবে অটো ছিনতাইয়ের পাশাপাশি মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় উক্ত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত এলাকার মাদক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষন ও পিসি/পিআর পর্যালোচনা সর্বোপরি গোপন তদন্তের মাধ্যমে নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিদের ব্যপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা শুরু হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। নয়নের অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু রবিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসলে অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে এবং হত্যার মূল রহস্য উন্মোচিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও জনাব মামুনুর রশিদ পিপিএম, অফিসার ইনচার্জ, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা এর সার্বিক সহযোগিতায় অলক কুমার দে এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে গত ১৭/০৭/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ মধ্যরাতে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন পশ্চিম খোলামোড়া টিনের মসজিদ এলাকা হতে নয়ন হত্যা জড়িত থেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ১। সজিব (২৪), ২। রবিন (২৩), ৩। রিয়াজ (২২), ৪। মনির (২২) দেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, ঘটনার দিন নয়ন তার বন্ধুদের ইয়াবা ট্যাবলেট ফ্রি খাওয়ানোর জন্য ঘটনাস্থলের পাশে চারতলা মসজিদ সংলগ্ন মাঠে দাওয়াত দেয়। ঘটনাস্থলে নয়ন ও তার বন্ধুরা উপস্থিত হয়ে আড্ডা দেওয়ার প্রাক্কালে তার পূর্বের মাদক বিক্রির পাওনা টাকার হিসেব করতে শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নয়নের বন্ধুরা ব্যাপারটি মেনে নিতে পারে না। তখন নয়ন তাদের বলে টাকা না দিলে কাওকেই ইয়াবা খাওয়াবে না। অতঃপর সজিব উত্তেজিত হয়ে নয়নের পিঠে ধারালো সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে সজোরে আঘাত করে, নয়ন বাচাঁর জন্য দৌড় দেয়। পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য রবিন, মনির ও রিয়াজ সহ আরও ০৩ জন এলোপাথারিভাবে নয়নের বুকে, গলায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাড়ালে সুইচ গিয়ার দিয়ে আঘাত করতে থাকে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতের এক পর্যায়ে শরীর থেকে প্রচন্ড রক্তক্ষরন হয়ে নয়ন ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরন করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের হেফাজত হতে লুন্ঠিত অটোরিক্সা উদ্ধার করা হয় ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০২ টি সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়। উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত অপর ০৩ জন আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।