দৈনিক তালাশ.কমঃ বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েই যাচ্ছে,যা ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।এই পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের বাড়তি চাপ সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোনোভাবেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছে না মানুষ।বর্তমানে কারণে-অকারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে।নিত্যপ্রয়োজনীয় একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের।কিন্তু আয় বাড়েনি।এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়, জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।বাজারে সবজির দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রতিটি সবজি কেজিপ্রতি দুই থেকে চার গুণ দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।সব মিলিয়ে কাঁচাবাজারের লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত।
তবে দ্রুত বাড়তে থাকা ভোজ্যতেলের দাম মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে।
বস্তুত বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একদল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন সময় চাল, তেল,গরু চিনি, মুরগি, পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছেন। দেশে পোলট্রি খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার সিংহভাগ উৎপাদন করে অল্প কয়েকটি কোম্পানি, সেই সঙ্গে ডিম ও মাংসের বাজারেরও বড় একটি অংশ তাদের দখলে। ১৩০ টাকার ব্রয়লার মুরগি কেন ২৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংসেরও দিগুণ দাম। পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়াকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে গত বছর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় সরকার। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে।বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের বাজারে দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। একবারে জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।
শুধু জ্বালানি তেলই নয়,আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের মূল্যহ্রাসের সুফল পাচ্ছে না দেশের মানুষ।
এ কারণে সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়েছে।দামের এই লাগাম টানতে হলে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে তদারকিও।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জানান, সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্যের স্ফীতির কারণে দৈনন্দিন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।ফলশ্রুতিতে তিনি পারিবারিক অন্যান্য খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন,এভাবে যদি দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে,তাহলে পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে বসো বাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।সিলেটে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমির হামজা জানান,আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই যাচ্ছে, যা খুবই হতাশাজনক।বন্দরের বাসিন্দা ফেরদৌস একই কথা বলেন।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করছে। ভাত,কাপড়,বাসস্থান জনগণের মৌলিক অধিকার। মনে রাখতে হবে,জনগণ না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। তাই জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকারের প্রতি জনগণের আকুল আবেদন।