দৈনিক তালাশ.কমঃনওগাঁ প্রতিনিধিঃনওগাঁসহ সরাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে প্রতিটি সরকারি দপ্তরের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ওয়েবসাইট। উদ্দেশ্য ছিল সরকারি সব কার্যক্রম সম্পর্কে সার্বক্ষণিক হালনাগাদ তথ্য থাকা ও জনসাধারণকে কাঙ্খিত তথ্যসেবা দেয়া। কিন্তু নওগাঁর মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ওয়েবসাইটে বাজেটসহ উন্নয়ন প্রকল্পের কোনো তথ্যই হালনাগাদ করা হচ্ছে না বছরের পর বছর।উন্নয়ন প্রকল্পের মূল্যায়ন বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ওই ইউপি থেকে সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয় না। এমনকি সরকারি নিয়ম মেনে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়া হলেও তা প্রদান করা হয় না। আইনে স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ! তথ্যের অবাধ প্রবাহ না থাকায় দুর্নীতির অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।অভিযোগ রয়েছে- অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করতে আইন উপেক্ষা করে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করলে ওই ইউপি’র কর্তাব্যক্তিদের থলের বিড়াল বেড় হয়ে আসতে পারে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য সংযোজন না থাকায় জনসাধারণ এবং সাংবাদিকদের পড়তে হচ্ছে বিভ্রান্তিতে। আর নাগরিকরা সঠিক তথ্যের পরিবর্তে পাচ্ছে ভুল তথ্য। এতে পূর্ণতা পাচ্ছে না ডিজিটাল বাংলাদেশ।এদিকে, একটি জাতীয় দৈনিক প্রত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি সোহেল রানা গত ২০ জুলাই মহাদেবপুর সদর ইউপি’র উন্নয়ন ও রাজস্ব তহবিলের আওতায় বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য চেয়ে সচিবের নিকট তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত বিধিমালার বিধি ৩ অনুযায়ী নির্ধারিত ‘ক’ ফরমে আবেদন করেন। নিয়ম অনুযায়ী ২০ দিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করার বিধান রয়েছে। অথবা কি কারণে তথ্য দেয়া যাবেনা তাও আবেদনকারিকে জানাতে হবে। কিন্তু ওই ইউপি সচিব গোলাম রাব্বানী মল্লিক এর কোনটিই করেননি।
অবশেষে সোহেল রানা বিধি অনুযায়ী এ ব্যাপারে তথ্য অধিকার আইনের বিধি ৬ অনুযায়ী নির্ধারিত ‘গ’ ফরমে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ওই তথ্য প্রাপ্তির জন্য আপিল আবেদন করেছেন। মহাদেবপুর সদর ইউপি’র সরকারি ওয়েবসাইটে “প্রকল্পসমূহ” ক্যাটাগরিতে প্রবেশ করে দেখা যায়, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, জিআর, এলজিএসপি ও এলজিইডির প্রকল্পের ৩-৪ বছর আগের আংশিক তথ্য সন্নিবেশন করা। এসব প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে কোথায় কি হচ্ছে- এর কোনোই তথ্য নেই। ফলে বাস্তবতার সাথে মিলছে না ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য। “ইউনিয়ন পরিষদ” ক্যাটাগরির বাজেটে প্রবেশ করে চলতি অর্থ বছরের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের বাজেটের তথ্য সন্নিবেশন করা রয়েছে।
এছাড়াও ওই ইউপি’র মাসিক সভা ও বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত সক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ নেই। ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডেও কোনোই তথ্য মেলেনি। শুধু এই ইউপি নয়, উপজেলার বাকি নয়টি ইউপি’র চিত্র প্রায় একই।
স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী যে তথ্যগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রকাশ করার কথা, সেগুলোও ওয়েবসাইটে নেই। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম, গুরুত্বপূর্ণ নোটিশসহ বিভিন্ন সভার কার্যবিবরণী, উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য নেই। এছাড়া বাজেট, আয়-ব্যয় ও উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা না থাকায় নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে তথ্যপ্রাপ্তির ন্যায্য অধিকার থেকে। ফলে মাঠপর্যায়ে দুর্নীতি ও প্রকল্পের অর্থ লুটপাট বাড়ছে। দ্রুত ওয়েবসাইটে সকল তথ্য সংযোজনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। তবে এর জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ, এটি কার্যকর হলে প্রকল্পের অর্থ লোপাট হবে না এবং ফাইল গায়েব করা যাবে না। ফলে এটি ঠেকানোর জন্য একটি চক্র তৈরি হয়েছে; সে জন্য তারা কাজ করছে বলে দাবি করেন তারা অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহাদেবপুর সদর ইউপি’র সচিব গোলাম রাব্বানী মল্লিকের সাথে মুঠোফোনে বিভিন্ন নম্বর থেকে দফায়-দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেননি। সোহেল রানার আপিল আবেদন প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু হাসান।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদে একটি চিঠি দিয়েছেন। মহাদেবপুর ইউপি’র ওয়েবসাইটে স্বপ্রণোদিত প্রকাশযোগ্য তথ্য প্রদর্শন না করার বিষয়ে কিছুই জানেন না নওগাঁর স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (উপসচিব) সালাহ্উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে তিনি জানান, তথ্য গোপনের কোনোই সুযোগ নেই। যে কোনো নাগরিক তথ্য চেয়ে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ তা আইন অনুযায়ী সরবরাহ করতে বাধ্য। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।
উজ্জ্বল কুমার সরকার
নওগাঁ।