কেরানীগঞ্জে চারতলার বন্ধ ফ্ল্যাটে সদরুল,নৃশংস ও ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের ৩জন গ্রেফতার

দৈনিক তালাশ.কমঃ প্রকৌশলী সদরুল আলম (৪০) কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন আরশিনগর ইউনুস মিয়ার বিল্ডিং এর ৪র্থ তলার ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে একা বসবাস করতেন। মাঝে মাঝে তার স্ত্রী বেড়ানোর জন্য আসলে উক্ত বাসায় থাকত। তিনি TAISE CORPORATION PTE LTD. ঢাকা এর সেলস্ এন্ড সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত ইং ১২/০৮/২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ২৩.০০ ঘটিকার সময় তার অফিসের কাজ শেষ করে উক্ত বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন। পরবর্তীতে ১৩/০৮/২০২৩ তারিখে বিল্ডিং এর ছাদে সকাল ১০.০০ ঘটিকার দিকে বাসার মালিক মোঃ ইউনুস মিয়া একটি মানিব্যাগ পান। মানিব্যাগের ভিতরে থাকা সদরুল আলম এর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলে তাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য তার রুমের সামনে গিয়ে দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করতে থাকেন। রুমের ভিতর থেকে কোন সাড়া-শব্দ না আসায় এবং ফ্ল্যাটের মেইন দরজা ভিতর থেকে শক্ত করে ছিটকানি লাগানো থাকায় বিল্ডিং এর মালিক বিল্ডিং এর অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের সহায়তায় লোহার তৈরী শাবল দিয়ে ছিটকানি ভেঙ্গে ফ্ল্যাটের দরজা খুললে দেখতে পান দরজার সামনে মেঝেতে সদরুল আলমের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। ফ্ল্যাটের সব রুমের মালামাল এলোমেলোভাবে ছড়ানো-ছিটানো, রান্নাঘরের ভেন্টিলেটরের আশেপাশের দেয়ালে পায়ের দাগ ছিল। তখন ফ্ল্যাটের মালিক জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে সংবাদ প্রদান করলে কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ট) হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। সুরতহাল প্রস্তুতকালে পুলিশ লাশের শরীরে ধারালো সুইচ গিয়ার চাকুর বুকে ও পিঠে ২টি রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। এ ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় ডিসিষ্টের আপন বড় বোন মোসাঃ রেবেকা সুলতানা রত্না বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার মামলা নং- ৪২, তাং- ১৪/০৮/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।

তদন্তঃ চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান, পিপিএম-বার, পুলিশ সুপার ঢাকা মহোদয় তাৎক্ষনিক নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ অ্যান্ড ট্রাফিক-দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার একটি চৌকস তদন্ত টিম কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও জনাব মামুনুর রশিদ পিপিএম, অফিসার ইনচার্জ, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা এর সার্বিক সহযোগিতায় এসআই (নিঃ) মৃত্যুঞ্জয় কুমার কির্তুনীয়া এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে গত ০৩/০৯/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাত ২৩.০০ ঘটিকার দিকে আল আমিন (২২) কে আরশিনগর এলাকা হতে তার পকেটে থাকা একটি সুইচ গিয়ার চাকুসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারের পর আল-আমিন কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, সে একজন পেশাদার চোর, প্রতিদিন রাতে মোহাম্মদপুর থানাধীন লাউতলা এলাকা হতে তার বন্ধু শুভ ও রিমনসহ একটি ভ্যানযোগে কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন অফিসে ঢুকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য মালামাল চুরি করে। তদন্ত টিম গ্রেফতারকৃত আল-আমিনকে সাথে নিয়ে তার দুই বন্ধু রিমন ও শুভকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে শুভ (২৪) কে মোহাম্মদপুর থানাধীন লাউতলা এলাকা থেকে পায়ে চালিত একটি ভ্যানসহ গ্রেফতার সক্ষম হয়। পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর থানাধীন চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে মোঃ রিমন (২৪) কে গ্রেফতার করা হয়। তারা জানায় ঘটনার দিন শুভ পায়ে চালিত ভ্যানে করে মোহাম্মদপুর থেকে তারা ০৩ জন কেরাণীগঞ্জ থানাধীন আরশিনগর এলাকায় এসে উপস্থিত হয়। তারা চুরি করার জন্য পাশাপাশি বিল্ডিং আছে ও সিকিওরিটি গার্ড নাই এমন বাসা খুজতে থাকলে তাদের চোখে ইউনুস মিয়ার বাড়িটিকে সুবিধাজনক বলে মনে হয়। ভ্যান নিয়ে রিমন অপেক্ষায় থাকে এবং শুভ ও আল-আমিনকে বাসায় ঢুকার জন্য পাঠিয়ে দেয়। বাসার পিছন দিকের সরু রাস্তা দিয়ে আল-আমিন ও শুভ দুই বিল্ডিং এর মাঝামাঝি আসলে শুভ আল-আমিনকে ধাক্কা দিয়ে বিল্ডিং এর সানসেট ধরিয়ে দেয় এবং আল-আমিন উপরে উঠে গেলে নিচে শুভ অপেক্ষা করতে থাকে। এভাবে ৩০/৪০ মিনিট পার হলে আল-আমিন উপর থেকে নিচে নেমে হাপাঁতে হাপাঁতে শুভকে বলতে থাকে দ্রুত পালাতে হবে আমি যখন ঐ বাসার ভেন্টিলেটর দিয়ে ভিতরে ডুকেছিলাম তখন বাসার মালিক ঘুম থেকে উঠে আমাকে ধরে ফেলে আমি ছুটে যাওয়ার জন্য তাকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে দুইবার পাঁড় দিছি বাসার ভিতরে আমি কিছু পাইনি। তারপর তারা তিনজন একত্রে দ্রুত মোহাম্মদপুর এলাকায় চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় চুরি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে মর্মে জানা যায়। মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *