কয়েকজন মেকানিক বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সারা দেশে বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। যে কোনো গাড়ির ইঞ্জিন পাল্টে ফেললে সেটি নতুন আয়ু পায়। দেশে পুরনো ইঞ্জিন আমদানি করার অনুমোদন রয়েছে। প্রচুর ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। পুরনো গাড়িগুলো ইঞ্জিন পাল্টে ভালোভাবেই চলাচল করে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে।
জানাগেছে, আইনের কঠোরতা না থাকায় নারায়ণগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন সাড়ে ৮ হাজার যানবাহন। এসব যানবাহনের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা। ফিটনেসবিহীনের সঙ্গে অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহনও। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কালেভদ্রে অভিযান চালাতে দেখা যায়। বিআরটিএ-কেও এই বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের ‘তদবিরের’ কারণে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না।
এদিকে, ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের বিচার বিভাগ একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সুফল মিলছে না। বরাবরের মতই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলছে ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলো। এক্ষেত্রে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ ফিটনেস বিহীন গাড়ির তালিকা করলেও অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
বিআরটিএ’র নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে নারায়ণগঞ্জের গাড়ির সংখ্যা সাকুল্যে ৮ হাজারের কিছু বেশি হবে। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে চলাচল করা ৭ হাজার ৮শ’ ৯৭টি ফিটনেস বিহীন গাড়ির মধ্যে অটো বা থ্রি হুইলার (সিএনজি) রয়েছে ৫ হাজার ১৭১টি,বিভিন্ন পরিবহনের বাস রয়েছে ১৩০টি, মিনি বাস ১৬৪টি,প্রাইভেটকার ১৪৬টি,লেগুনা ২৬০টি, কাভার্ডভ্যান ৭২টি,ডেলিভারি ভ্যান ১৩৪টি,জিপ গাড়ি ২৮টি,মাইক্রো বাস ৩৫টি,পিকআপ ১৪৩টি,স্পেশাল পারপাস কার ৯৩টি,ট্রাক ৯২৮টি,ট্যাংকার ১৪৯টি,ট্রাক্টর ৩৪৮টি,কারগো ভ্যান ৯টি এবং অন্যান্য ফিটনেস বিহীন আরো ৮৭টি গাড়ি রয়েছে নারায়ণগঞ্জে।এগুলোর বেশির ভাগই অবকাঠামোগত দিক থেকে একেবারেই জরাজীর্ণ। ফিটনেস নবায়ন না করা এই বাহনগুলো সড়কে চলাচলের উপযোগী না হলেও তা দাপিয়ে বেড়ায় শহর থেকে শহরতলী।
এই বিষয়ে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলেন ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রতিরোধ করার জন্য সড়কে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। তাছাড়া,দাপ্তরিক বা নিজস্ব কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই। ফলে চাইলেই অভিযান চালানো যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হলে সেখান থেকে ম্যাজিস্ট্রেট প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়। এরপর আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি।
সরকারের এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে ‘সড়ক পরিবহন আইন,২০১৮’-এর ১০৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে, যাতে ধারাটি লঙ্ঘন করার অপরাধে তিন মাসের কারাদ-বা ২০ হাজার টাকা অর্থদ-কিংবা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রাখা হয়েছে।
গেজেটের কপি নারায়ণগঞ্জে পৌঁছার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন,সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হবে। যেসব বাস ও মিনিবাসের বয়স ২০ বছর এবং ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী গাড়ির বয়স ২৫ বছর হয়ে যাবে সেগুলোকে আর সড়কে চলতে দেয়া হবে না।এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ করে ফেলা হবে।গাড়ির প্রস্তুতকাল থেকেই বয়স হিসাব করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন,ঢাকা বিআরটিএ থেকে ২০-২৫ হাজারের মতো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়েছে।কিন্তু এসব গাড়ি চলাচল করে নারায়ণগঞ্জে। রেজিস্ট্রেশন নেয়া গাড়ির মধ্যে একটি বড় সংখ্যা মোটরসাইকেল।মোটরসাইকেলের কোনো ফিটনেস সনদ নিতে হয় না।অন্য গাড়িগুলোকে নিয়মিত ফিটনেস সনদ নিতে হয়। আগে এক বছরের জন্য ফিটনেস দেয়া হলেও এখন দুই বছরের জন্য দেয়া হয়।কিন্তু নারায়ণগঞ্জে অন্তত ৮ হাজার বাস,ট্রাক কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন গাড়ি ফিটনেস নবায়ন করেনি।এসব গাড়ির কোনো ফিটনেস নেই।
বিআরটিএ’র অপর একজন কর্মকর্তা বলেন,ফিটনেস রয়েছে এমন গাড়িগুলোর মধ্যেও হাজার হাজার পুরনো গাড়ি রয়েছে।এসব গাড়ি জোড়াতালি দিয়ে চলে। এগুলোর ফিটনেস রয়েছে,তবে এখন থেকে ২০ বছরের বেশি পুরনো বাস,মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক, কাভার্ডভ্যানকে আর ফিটনেস সনদ দেয়া হবে না।এগুলো ফিটনেসের জন্য এলে জব্দ করা হবে।
এগুলো রাস্তায় চলাচলের কোনো সুযোগ না থাকলেও চলাচল করে।এসব গাড়ির বয়স ৩০-৪০ বছর।এমনকি ৫০ বছরের বেশি পুরনো গাড়িও রয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরনো গাড়িগুলো রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে এসব গাড়ি প্রচুর কার্বন নিঃসরণ করে পরিবেশ ধ্বংস করছে।সড়কের নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষার জন্যই পুরনো গাড়িগুলো স্ক্র্যাপ করে ফেলা হবে। সরকারি সিদ্ধান্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।