দৈনিক তালাশ ডটকম : জামালপুর মেলান্দ জেলার মেলান্দহের আদ্রা ইউনিয়নে নামবন্ধ এলাকায়, সরকারি খাস জমি, ফসলী জমি ধ্বংস করে মাটি কাটার রোধে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। ফলে সোনা ফলানো মাঠ ধ্বংস করে মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে। সোনা ফলানো সেই মাঠে ধান কাটার কাচির বদলে চলছে স্কেবেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) আর ইটভাটার মাহিদ্রাগাড়ি । কৃষি ভূমি রূপান্তর হয়েছে পতিত ভূমিতে। কোথায়ও আবার গভীর গর্ত হয়ে যাওয়ায় সে সব জলশয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় নিচু জমিগুলো পরিণত হয়েছে বড় বড় পুকুরে। এ দৃশ্য জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা আদ্রা ইউনিয়নে নামাবন্ধ এলাকার।
দুই শতাধিক একর খাস ও ফসলি জমি বড় বড় পুকুর আর জলাশয় পরিনত হয়েছে। এতে পরিবেশগত প্রতিকূলতার আশঙ্কা বাড়ছে। এতো কিছুর পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি খেকো রুকু’র বিরুদ্ধে ফসলি জমির মাটি ক্রয়-বিক্রি রোধে কোনরকম পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রসাশন। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, চুক্তিতে বছরের পর বছর বিস্তীর্ণ ফসলি জমির বুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছেন স্থানীয় রুকু নামের এক ব্যাক্তি। এভাবে নামাবন্ধ এলাকায় খাস এবং ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।আইন অমান্য করে এইসব জমির মাটি নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে দিনদিন ওই এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে ফসল উৎপাদন কমার পাশাপাশি বহু কৃষক বেকার হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মাটি কাটায় পরিবেশও পড়েছে হুমকির মুখে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দেদারছে কাটা হচ্ছে মেলান্দহ উপজেলার আদ্রা নামাবন্ধ এলাকায় খাস এবং ফসলি জমির মাটি। ওই এলাকার মাটি কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে। মাটি কেটে নেওয়ায় জমির বিভিন্ন স্থানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বড় এস্কেবেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে খাস ও কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে মাহিন্দ্রগাড়িতে ভরা হচ্ছে। এ কাজে জড়িত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব মাটির শেষ গন্তব্য ইটভাটা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আদ্রা ইউনিয়নের গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকার প্রায় দুই শতাধিক একর খাস ও ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হয়েছে। এখনো চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। কয়েক বছর ধরে ‘রুকু বাহিনী’ নামের একটি প্রভাবশালী চক্র কৃষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি, ওয়ারিশ পাওনা ও বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে।
মাটি কাটার ছবি তুলতে গেলে এক যুবক বাধা দেন। তিনি বলেন, এলাকায় ছবি তোলা, ভিডিও করা নিষেধ। এসব করলে ঝামেলা হবে। এর মধ্যে সংবাদকর্মী দেখে এলাকার ৮–১০ জন কৃষক জড়ো হন। প্রকাশ করেন নিজেদের অসহায়ত্ব। তারা বলেন, আদ্রা ইউনিয়নের নামাবন্ধ এলাকায় গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে রুকু নামের এক ব্যক্তি জোর করে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এস্কেবেটর দিয়ে জমির গভীর থেকে মাটি কাটার ফলে পার্শ্ববর্তী জমিও ভেঙে পড়ে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা নামমাত্র মূল্যে ওই বাহিনীর কাছে জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।
এলাকাবাসী জানায়, চক্রটি এতই প্রভাবশালী যে তাদের ভয়ে জমির মালিকরা কিছু বলতে সাহস পান না। আদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকা জানান, কয়েক বছরে তার ইউনিয়নের অর্ধেক আবাদি জমি পুকুর আর জলাভূমিতে চলে গেছে। যেটুকু জমি অবশিষ্ট ছিল নতুনভাবে তাতেও চলতে শুরু করেছে খননযন্ত্র।
ইতিপূর্বে উক্ত জায়গা থেকে অবৈধ মাটি কাটার দায়ে তিনটি মাহিন্দ্র গাড়ি জব্দ করে নিয়ে যায় উপজেলা ভূমি অফিসার জোহরা সুলতানা যুঁথি।
উল্লেখ্য, বিশেষ সুত্রে জানা যায়, আদ্রা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল করিম ফরহাদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রুকুর উত্থান। সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল করিম ফরহাদ থাকা অবস্থায় অত্র ইউনিয়নের কর্মসূচির নামে রাস্তাঘাটে মাটি কাটা হতো উক্ত নামাবন্ধ এলাকার খাস জমি থেকে রুকুর মাধ্যমে।