পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা নিলেই ফল খারাপ হবে এটা যৌক্তিক কথা নয়

দৈনিক তালাশ.কমঃমো:জাহিদ হাসান বিশেষ প্রতিনিধি:
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবছর কমেছে পাসের হার। ফেল করেছেন তিন লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। ধস নেমেছে জিপিএ-৫ এর ক্ষেত্রেও। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ শিক্ষার্থী। এবার পেয়েছেন মাত্র ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠায় এবছর সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতেই পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে বলে দাবি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির।তবে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষায় বসেছেন তেমনটিও নয়। যদি ঘাটতি থেকেই থাকে, তাহলে তা পূরণ করে পরীক্ষায় বসানো উচিত ছিল। পূর্ণ নম্বর-সময়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নিলেই ফলাফল খারাপ হবে, এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার ভালো-মন্দ শিক্ষামন্ত্রী দেখভাল করেন, তিনি তার কথা বলেছেন। পূর্ণ নম্বর-সময়ে পরীক্ষা নেওয়ায় ফল খারাপ হয়েছে, এটি একটি ব্যাখ্যা হতে পারে। সেটি যৌক্তিক কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে; বোঝাতে হবে।’ঘাটতি কাটাতে শিক্ষার্থীদের তড়িঘড়ি পরীক্ষা নেওয়া কতটা উচিত, তা নিয়েও ভাবতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, করোনার সময় আমরা খারাপ সময় কাটিয়েছি। ক্লাসে পড়ানো যায়নি, পরীক্ষা ঠিক সময়ে নেওয়া যায়নি। সেই ঘাটতি আমরা এখন পূরণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ২০২৩ সালে যেসব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে এবং পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হবে, সেটা কি শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে জানানো হয়েছিল? তারা কোন সিলেবাসে, কবে পরীক্ষা দেবে; সেগুলো তারা ঠিকমতো জানতো কি না।’যদি সেটা জানানো হয়, তাহলে তো প্রস্তুতি এবং ফলাফল খারাপের প্রশ্নই আসে না। যদি জানানো না হয়, সেটা তো শিক্ষার্থীদের এক ধরনের চাপে ফেলার শামিল। আবার পূর্ণ নম্বরের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে হলে শিক্ষার্থীদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে শিক্ষকদের গাইডলাইন দেওয়াটাও উচিত ছিল। সবাই তো এখন সচেতন। অনুপস্থিতি ছাড়া ফেল করার মতো খুব বেশি শিক্ষার্থী তো থাকারই কথা নয়।’শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে সায় দিলেও ভিন্ন প্রশ্ন শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ফেল করবে কেন? তাও আবার এতসংখ্যক! তারা তো সবাই প্রাক-নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। অর্থাৎ তারা পাস করার যোগ্য। জিপিএ বা গ্রেড পয়েন্ট কম-বেশি হতে পারে। নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে হেরফের হতে পারে। কিন্তু ফেল কেন?’তিনি বলেন, ‘কম নম্বরে পরীক্ষা হোক আর বেশি নম্বরে হোক; ফেল কমাতে হবে। ফেল করলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে আঘাত পায়। সেখান থেকে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টসাধ্য। অনেকের পরিবারে আর্থিক সমস্যা। তারা একবার ফেল করে পরে আর সেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে না।’এদিকে, রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ফলাফল তুলে ধরতে আয়েজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে পাসের হার কমা এবং জিপিএ-৫ এ ধস নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, ‘গত বছর বা করোনার কারণে গত দু-তিন বছরের ফলাফলের তুলনা করবেন না। গতবার পরীক্ষা সহজ ছিল। কম বিষয়, কম সময় ও কম নম্বরের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য পরীক্ষাটাও তুলনামূলক কঠিন হয়েছে। এতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কিছুটা কমেছে।’দীপু মনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগের যে পরীক্ষাগুলো হয়েছিল, সেখানে কেমন রেজাল্ট হয়েছিল সেটা দেখতে হবে। সেটার সঙ্গে মেলালে বোঝা যাবে। বিশ্লেষণ করুন—দেখবেন তখনকার চেয়ে এবার ফলাফলটা ভালো।’প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী—পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে বরিশাল। এ বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে গত বছর বরিশালে পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পাসের হারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা বোর্ডে পাস করেছে ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর ঢাকায় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ডে এবার পাস করেছেন ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ। দিনাজপুরে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত চট্টগ্রামে এবার পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, গত বছর এ হার ছিল ৮১ দশমিক ৪ শতাংশ। ময়মনসিংহে পাস করেছেন ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী, গত বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ। সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে তলানিতে থাকা যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অথচ গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।মাদরাসা বোর্ডে আলিমে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, গত বছর এ হার ছিল ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *