দৈনিক তালাশ.কমঃ স্টাফ রিপোর্টার:ফতুল্লায় আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অটোরিক্সা চাঁদাবাজদের শিরোমনি আজিজুল হক ওরফে বরিশাইল্লা আজিজুল ও তার বাহিনী।
জানা গেছে, শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহমেদ পালাশের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবৎ অটোরিক্সার চালকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে আজিজুল। কোন অটোচালক চাঁদা না দিলে তার অটোরিক্সা থেকে জোড় করে সিট খুলে রাখছে এই চাদাবাজ চক্র। অটোরিক্সা চালকরা অভিযোগ করে জানান, ফতুল্লার বিভিন্ন স্থানে দাড়িয়ে আজিজুলের নেতৃত্বে সুমন, আনোয়ার হোসেন, আলী আকবর, শাহজাহান, ইব্রাহিম, আসলাম ও দেলোয়ার তাদের নিজস্ব প্লেট না লাগানো ও চাঁদা না দেওয়ার কারনে অটোরিক্সার সিট খুলে রাখে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় বরিশাইল্লা আজিজুল বিগত কয়েক বছর পূর্বে “নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা রিক্সা চালক ইউনিয়ন” রেজিঃ নং- ঢাকা-৩৭৩২ কমিটির ব্যানারে ঢাকা থেকে রিক্সা চালকদের সংগঠনের কমিটি নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ঐ কমিটির কার্যক্রম রূপ নেয় চাঁদাবাজিতে। রিক্সার চালকদের নামে কমিটি গঠন করে বর্তমানে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মিশুকের কাছ থেকে। মিশুক ও অটোরিক্সা প্রতি প্লেট দেয়ার নামে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত অগ্রিম এ্যাডভান্স নেয়া হয়। আর ঐ প্লেটধারী গাড়ী হতে প্রতিমাসে ১ শত ৫০ টাকা থেকে ২ শত টাকা হারে প্রকাশ্যে চাঁদা উত্তোলন করছে আজিজুল বাহিনীর প্রায় দেড় শতাধিক চাঁদাবাজ। এরা শ্রমিকলীগের শাখা কমিটিতে অনেকে নেতা হিসেবে পদে থাকলেও আসলে তাদের প্রকৃত কাজ হচ্ছে অটো এবং মিশুক হতে মোড়ে মোড়ে চাঁদা আদায় করা। আজিজুল বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শাখা কমিটি বিক্রী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজ আজিজুল বর্তমানে সদর উপজেলার পঞ্চবটি, ফতুল্লার পোষ্ট অফিস মোড়, আলীগঞ্জ, পাগলা বাজার, শাহীবাজার, ভূইগড়, জালকুড়ি, শিবু মার্কেট সহ একাধিক এলাকায় “নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা রিক্সা চালক ইউনিয়ন” এর শাখা কমিটি দিয়ে শতাধিক চাঁদাবাজ দ্বারা অটোরিক্সা-মিশুক হতে প্লেট দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে।
এদিকে, সাধারণ ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক ও মালিকবৃন্দরা জানান, আজিজুল শ্রমিক নেতা কাওছার আহমেদ পলাশের নাম বিক্রী করে রিক্সা চালকদের সংগঠন তৈরি করে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা- মিশুকের চালক/মালিক হতে জোরপূর্বক ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই চাঁদার টাকা আদায় করছে। আর আজিজুল বাহিনীর আদায়কৃত চাঁদার টাকার একটি বড় অংশ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথেও ভাগাভাগি করেন। প্রতিদিন বহু চালক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চাঁদাবাজ আজিজুল বাহিনীর লোকজন তাদের উপর চালাচ্ছে মারধর সহ অমানবিক অত্যাচার। আজিজুল বাহিনী অনেক সময় চাঁদার টাকার জন্য মিশুক চালকদের গাড়ি আটক রেখে বাড়ি থেকে টাকা আনিয়ে গাড়ি নিবে বলে থাকে।
ভুক্তভোগী একাধিক ইজিবাইক চালক জানান, আজিজুল বাহিনীকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলেই তাঁর বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে আমাদের নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে। ইজিবাইক আটক রাখা, সীট খুলে নিয়ে যাওয়া, ব্যাটারি রেখে দেয়াসহ আমাদের শারীরিক ভাবেও লাঞ্ছিত করে থাকে। আজিজুল বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরা এই বাহিনীর কাছে জিম্মী হয়ে পরেছি। ইতিপূর্বে প্রশাসনের হাতে বহুবার গ্রেফতার হয় চিহ্নিত চাঁদাবাজ আজিজুল। কিন্তু শ্রমিকলীগের বড় নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় আজিজুল বার বার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। জামিনে মুক্ত হয়ে আজিজুল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বর্তমানে আজিজুলের প্লেটধারী অটোরিক্সা ও মিশুকের সংখ্যা প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার। প্রতি মাসে উক্ত গাড়ি হতে ৩০ লক্ষ হতে ৪০ লক্ষ টাকা চাঁদা নিরবে উত্তোলন করছে আজিজুল।
এ বিষয়ে প্রশাসনের প্রতি সাধারণ ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক ও মালিকেরা অচিরেই চিহ্নিত চাঁদাবাজ আজিজুলের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
উল্লেখ্য, বিগত সময়ে পুলিশ সুপার হারুন নারায়ণগঞ্জে আসার পর আজিজুল বাহিনী দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে ছিলো।