দৈনিক তালাশ.কমঃ দেবীগঞ্জ থেকে রওশন জালালীর প্রতিবেদন:প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির মৃত্যুর পর জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে সদ্য জাতীয়করণ হওয়া শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নুরুজ্জামান ও তার তৈরি করা কথিত সভাপতি মহসিন আলীর বিরুদ্ধে।
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের কোট ভাজনী এলাকায় ৫০ শতক জমির উপর ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১৭ সালে বিদ্যালয়টি পাঠদানের অনুমতি পায়। বিদ্যালয়ের জমিদাতা ছিলেন একই এলাকার তারামদ্দিন সরকারের ছেলে মো: আইয়ুব আলী। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমৃত্যু তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইয়ুব আলী সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে মোট ১১ জন নিয়োগ প্রদান করেন। আইয়ুব আলী ২০২০ সালের ১৩ মে মৃত্যুবরণ করলে মহসিন আলী নামে এক ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধান শিক্ষক নিজেই। অভিযোগ উঠেছে, আইয়ুব আলীর মৃত্যুর পর প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান জালিয়াতি করে কয়েকজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন। কৃষি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক মো: মোতাহার হোসেন চাকুরীতে থাকা অবস্থায় তার জাল ইস্তফাপত্র তৈরি করে আব্দুল মালেক নামে একজনকে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান। এই ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষক মোতাহার হোসেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। সেই সাথে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের পরে ২০২০ সালের জুনে শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে পরিদর্শনে আসেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো: আখতারুজ্জামান ও রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা: রোকসানা বেগম। পরিদর্শন প্রতিবেদনে বিদ্যালয়টির বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসে। প্রতিবেদনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মূল পত্রিকাসমূহ ত্রুটিপূর্ণ, ২০১৫ সালে নিয়োগ প্রদান করা হলেও ২০১৫-২০১৯ সালের হাজিরা খাতা নতুন তৈরি করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে ছয়জন শিক্ষক- ইংরেজির সঞ্জীব কুমার রায়, ইতিহাসের মোছা: সাবিনা রোশনি, ব্যবসা শিক্ষার মহাদেব চন্দ্র রায়, সমাজ বিজ্ঞানের মোছা: ফারজানা এনি, বাংলার মো: মাজিদুল ইসলাম, গণিতের মো: আবুল কাসেম; একজন কম্পিউটার ল্যাব সহকারী মোছা: মরিয়ম বেগম, একজন অফিস সহকারী মো: জাকির হোসেন, দুইজন অফিস সহায়ক ফারুক ও মোছা: সোনালী আক্তার, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো: হাসিবুল ইসলাম ও একজন নৈশ প্রহরী মো: জাহিনুরকে নিয়োগ প্রদানে সরকারি বিধি অনুসরণ করা হয়নি এবং তাদের নিয়োগের ফলাফল ও শীট এবং নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোতাহার হোসেন ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কৃষি শিক্ষা বিষয়ে যোগদান করলেও একই পদে ১৭ সেপ্টেম্বর আব্দুল মালেক নামে অপর একজনকে পুনরায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের তারিখ দেখানো হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সমাজবিজ্ঞান, বাংলা ও কৃষি শিক্ষা বিষয় পদ শূন্য হওয়ার আগেই নিয়োগ প্রদান করা হয়। আবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। অডিট টিম মতামত দেন যে, ব্যাকডেটে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সাবেক সভাপতি আইয়ুব আলীর পরিবারের সাথে কথা হলে তারা দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান আইয়ুব আলীর স্বাক্ষর জাল করে বড় রকমের আর্থিক লেনদেন করে বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রদান করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন জমিদাতার পরিবারের সাথে কোন পরামর্শ ছাড়াই মহসিন আলী নামে এক ব্যক্তিকে ভূয়া সভাপতি বানিয়ে এইসব অনিয়ম করে চলেছেন বলেও জানান তারা। বর্তমান সভাপতি মহসিন আলীর সাথে কথা বলতে চাইলে উনি বলেন শিক্ষক নিয়োগ আর টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না স্কুলের প্রধান শিক্ষক আপনাদের জানাবেন। স্কুল সময়ে প্রধান শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত না থাকায় সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামানকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি পরে এই বিষয়ে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।