দৈনিক তালাশ.কমঃনিজস্ব প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন সৈয়দপুরে এবার চায়না প্রজেক্টের ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য রাখা রড থেকে প্রায় ৩ টন রড চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ২৬ অক্টোবর রাত তিনটায় এ চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানাগেছে।
জানাগেছে, প্রথমে ওই চোর চক্রটি প্রজেক্টের সিকিউরিটি গার্ডদের ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভয়ভীতি প্রর্দশন করে। এরপর সিকিউরিটি গার্ডরা একটু সরে গেলেই শুরু হয় চুরি। মঙ্গলবার রড চুরি করে পানিতে ডুবিয়ে রাখে চোর চক্রটি। পরে সুযোগবোঝে পানি থেকে রড তোলার সময় ওই চোর চক্রটির বেশ কয়েকজনকে দেখে ফেলে সিকিউটি গার্ডরা। চোরেরা সব স্থানীয় ও চিহ্নিত বলে চায়না প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে সিকিউরিটি গার্ডরা।
এ বিষয়ে ২৭ অক্টোবর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় সৈয়দপুর এলাকার চায়না প্রজেক্ট অফিসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমানের সাথে জরুরি মিটিংয়ে বসেন প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ। মিটিংয়ে প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী, প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম, ১নং ওয়ার্ড মেম্বার ইকবাল প্রধান বাপ্পি, ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার শেখ মোহাম্মদ রফিক, ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার বিপ্লব হোসেন হাবিব, ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জল হোসেন কাবিল, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার নাজম বেগম প্রমূখ।
মিটিং শেষে জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানতে চাইলে তারা গণমাধ্যমকে জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর থানার মধ্যে মসাবন নরসিংপুর বাড়িরটেক এলাকা থেকে সৈয়দপুর পশ্চিম মাদবর বাড়ি হয়ে কাঠপট্টি তেলের পাম্প পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজের জন্য রডসহ অনেক সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। চোরেরা এ সমঞ্জাম বিশেষ করে রড চুরি জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা কখনো সিকিউরিটি গার্ডদের হুমকি ধামকি, আবার কখনো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, এমনকি তারা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রের মহড়াও দিয়ে থাকেন। তাদের এ ধরনের কর্মকান্ডে অনেক সময় সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খায়। গতকাল (বুধবার) রাত তিনটায় ফ্লাইওভারের জন্য রাখা প্রায় তিন টন রড ওই চোর চক্রটি চুরি করে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চোরকে ৪ জন সিকিউরিটি গার্ডরা দেখে ফেলে। তারা সবাই এলাকার লোক বলে সিকিউরিটি গার্ডরা জানিয়েছে। আজ এসব বিষয় নিয়েই চায়না প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে। ওসি সাহেব বলেছে, ওই চার জন সিকিউরিটি গার্ডকে নিয়ে রোববার থানায় যেতে। ওই চিহ্নিত চোরদের গ্রেফতার করা গেলে পুরো চক্রটিকেই ধরা সম্ভব হবে। আমরা সকল জনপ্রতিনিধিরা এ চোর চক্রটিকে ধরার জন্য প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগীতা করার কথা বলেছি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, সৈয়দপুরে এ চোরের ঘটনা নতুন নয়। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের সময়ও এ অঞ্চলে সেতু নির্মাণের জন্য রাখা টনকে টন রডসহ বহু সরঞ্জাম চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় বহু আসামী গ্রেফতারও হয়েছে। ওই ঘটনায় তখন হিমু, রিহান, পারভেজ, শাওন, সেলিম ও অনিকসহ আরও অনেকের নামই তখন উঠে আসছিলো। তারা সকলেই এলাকার বিচ্ছু বাহিনী নামে পরিচিত। এ বাহিনীটি বড় ডেঞ্জারাস। মানুষ খুন করতেও এরা বিন্দু পরিমান দ্বিধাবোধ করেনা। সেতুর টনকে টন রড চুরি করে এরা হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই বাহিনীর বহু সদস্য এখন জামিনে আছেন। এরা সকলেই চিহ্নিত। যেহেতু এ বাহিনীটি আগেও চুরির সাথে জড়িত ছিলো, সুতরাং তারাই এ ধরনের চুরি ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ।
এলাকাবাসী পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ হলে আমাদের এলাকা আরও উন্নত হবে। এটা সরকারের না, এটা আমাদের সকলেরই সম্পদ। এটা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদেরও। তবে অনেক সময় জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে চুপ থাকতে হয়। তাই পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা তৎপর হন, আমরা আপনাদের পাশে আছি।