জনগণকে বলবো আপনারা রাজপথে নেমে আসুন: সেলিমা রহমান

দৈনিক তালাশ.কমঃমো:জাহিদ হাসান বিশেষ প্রতিনিধি:
বর্তমান সরকারের পদত্যাগে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।

তিনি বলেন, জনগণকে বলবো আপনারা এগিয়ে আসুন। আমরা কিন্তু আপনাদের জন্য লড়াই করছি। আপনারাও রাজপথে এগিয়ে আসুন। দেখা যাক কতজনের রক্তের ওপর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারো ক্ষমতায় যেতে পারেন।মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ শীর্ষক সমাবেশ এসব কথা বলেন সেলিমা রহমান।

তিনি বলেন, একটা ফ্যাসিস্ট সরকার কীভাবে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার তার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দেশের জনগণের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। শাহজাহান ওমরকে বিএনএমএ বা কিংস পার্টিসহ আরও কি কি দলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে সরকার।সুশাসন ফিরিয়ে আনতে লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, দেশের মানুষ এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা।

নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পুলিশ যাকে গ্রেফতার করতে যায়, তাকে না পেলে তার স্বজনদের ধরে নিয়ে যায়। এরা মানুষের কষ্টে আনন্দ পায়। ক্ষমতায় যারা বসে আছেন, তারা পাষাণ, তাদের হৃদয় পাথর। আপনারা প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দেবেন, উনার কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার আছেন। তাদের স্বজনরা একযোগে রাস্তায় এলেই তো হয়ে যায়। এ নির্বাচন নির্বাচন নয়, এটা জনগণকে নির্বাসনে পাঠানো। চলুন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে লড়াই করি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে যারা কারাগারে বন্দি, তাদের স্বজনরা বিচার চাইতে এসেছেন। ২৮ তারিখের সমাবেশে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সামরিক শাসন দেখেছেন। আমরা আপনার কাছে বলতে চাই, আদালত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, জনগণের শেষ ভরসা। আপনি বিচারপতিদের নির্দেশ দেন তারা যেন ন্যায়বিচার করেন। দমন-পীড়ন করে সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে। আপনার আদালতে যদি ন্যায়বিচার না হয়, তাহলে জনগণের আদালতের বিচারে আপনারা কেউ পার পাবেন না। কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তারা পুরো বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, সরকারকে বলবো নির্যাতিত পরিবারের কথা শুনুন। আমার অনুরোধ যাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে রেখেছেন অতিসত্বর তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, আমার ছোট্ট শিশুটিও পুলিশের আচরণ দেখেছে। এখন পুলিশ দেখলেই ভয় পায়। শেখ হাসিনা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অভিশপ্ত বাংলাদেশ তৈরি করছেন। পুলিশ যে আচরণ করছে, এদের বিচার হবে। বিচারপতিদের বলি, সরকারের অবৈধ আদেশ পালন করে জনগণের রোষানলে পড়বে না। আরেকটু ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে। আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সাজানো ফরমায়েশি মামলায় গ্রেফতারদের স্বজনরা মানবিক দাবি নিয়ে এখানে এসেছেন। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দেশে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজার পরিবর্তে বাংলাদেশে এখন মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে সরকার। পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করছে। তাতে মনে হয় পুলিশ সরকারের অঙ্গ সংগঠন।

সভাপতির বক্তব্য জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়াকে একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমার বাড়িতে এসে তাকে গ্রেফতার করার সময় আধা ঘণ্টা পিটিয়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও হার মানিয়েছে।

এদিকে সমাবেশকারীরা সমাবেশ শেষে তাদের দাবি নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তাদের বাধা দেয়।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ইউট্যাব সভাপতি প্রফেসর এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএনপি নেত্রী আসিফা আশরাফী পাপিয়া।সমাবেশে আসা কারাবন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের স্বজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের স্ত্রী মাহাবুবা খানম, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের স্ত্রী শায়লা জামান। যুবদলের নেতা রাজিব ও লিয়ন- এই দুই ভাইয়ের পক্ষে তাদের বোন আফরোজা পারভিন জবা। বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপির নেতা ইদ্রিস আলীর স্ত্রী শিউলি বেগম, বিএনপির নেতা ইউনুস মৃধার কন্যা আনিকা প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *