দৈনিক তালাশ.কমঃদেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: শিক্ষার আলোয় আলোকিত আর নৈতিকতা শিখতে যখন বিদ্যালয়ে পাঠদান নিতে ছুটছে শিক্ষার্থীরা তখন শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে নীতি নৈতিকতা শেখানো অনেক শিক্ষক ই নিজেকে স্বাবলম্বী করতে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ সুকাতু প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিভিন্ন সময় দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিদের বিরুদ্ধে। নিয়ম মেনে কমিটি যেমন পরিবর্তন হয়, নিয়ম করে তেমনি লুটপাট হয়। অনুসন্ধানে গিয়ে সরেজমিন জানা যায়, বিদ্যালয়ের নামে ৪ একর জমিতে পুকুর, কালীগঞ্জ বাজারে দুই শতাধিক দোকান এবং বিদ্যালয় মাঠ ইজারা দিয়ে প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা আয় হয়। এরমধ্যে পুকুরটি কাগজে কলমে ১০ লাখ টাকায় তিন বছরের জন্য ইজারা দেয়া হলেও এর বাইরে ০৩ লাখ টাকা নেয়া হয়, প্রতি মাসে প্রায় দোকান ভাড়া আসে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সেই সাথে বিদ্যালয়ের মাঠ এক বছরের জন্য ০১ লক্ষ টাকায় ইজারা দেয়া হয়। এই হিসেবে বছরে বিদ্যালয়ের গড় আয় দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে বাৎসরিক বড় ধরণের আয়ের প্রায় পুরো অংশ যায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের পকেটে তবে সহকারী শিক্ষক গণ ও কিছু পেয়ে থাকেন মর্মে সত্যতা মিলেছে। সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, ‘বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য এখানে সবাই প্রতিযোগিতা করে। সভাপতি হওয়া মানেই বিদ্যালয়ের আয়ের টাকায় আয়েশ করা। আর শিক্ষকরা বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা নেন, নয়তো আয়ের টাকা যায় কোথায়!?। বিদ্যালয়ের আয়ের পরিমাণ অনেক হলেও যৌক্তিক ব্যয়ের পরিমাণ স্বল্প। এরপরও বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে চলে নয়-ছয়’। বিদ্যালয়ের দোকানের সংখ্যা ও আয়-ব্যয়ের হিসেব জানতে চাওয়া হলে প্রধান শিক্ষক বলেন, আয়-ব্যয়ের হিসেব সাংবাদিকদের দিতে বাধ্য নই, আমি আমার ব্যাবস্থাপনা কমিটির নিকট হিসেব দিবো। বিদ্যুৎ বিল, তিনজন স্টাফের ভাতা, আপ্যায়ন বিল বাদ দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ টাকা বিদ্যালয় তহবিলে উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু বছর শেষে তহবিলে টাকা থাকে মাত্র দুই থেকে তিন লাখ। বিদ্যালয়ের এত আয় থাকলেও প্রায় আড়াই বছর আগে স্থায়ী কমিটি না থাকার পরও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের গাছ কাটা হয় বেঞ্চ তৈরির কথা বলেন। স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক সুবাস চন্দ্র রায় এর সাথে মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি বলেন, আমি আসার পর বিদ্যালয়ের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে শ্রেণীকক্ষ রঙ করছি, পরে বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা নেব। বিদ্যালয়ের এত টাকা আয়ের পরও ব্যক্তিগত টাকা কেন খরচ করতে হবে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বাৎসরিক এক লাখ টাকা চুক্তিতে বিদ্যালয়ের মাঠ ইজারা দেয়া হলেও মাঠ সংস্কারে ব্যয় হয় না সেই টাকা। নিয়মিত সাপ্তাহিক হাট বসার কারণে মাঠে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সাপ্তাহিক হাটের উচ্ছিষ্টে বিদ্যালয় মাঠের পরিবেশও আগের মতো নেই। এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের তথ্য দেয়া যাবে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, আমরা সাংবাদিকদের বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে পারি না। আমি শুধু ব্যবস্থাপনা কমিটিকে তথ্য দিতে পারি। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রদানে বাধ্যবাধকতার কথা জানালেও তিনি তা ভ্রুক্ষেপ করেন নি। উপজেলা কিংবা জেলা শিক্ষা অফিসারকেও এই হিসেব দিতে বাধ্য নন বলেও জানান প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ উঠেছে বর্তমান প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিদ্যালয় উন্নয়নের নামে ইচ্ছে মতো টাকা ব্যয় করে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক শিক্ষক বলেছেন, বিদ্যালয়ের আয়ের টাকা থেকে শিক্ষকরাও টাকা পান। ফলে তহবিলে তেমন টাকা উদ্বৃত্ত থাকে না। আর প্রতি বছর লোক দেখানে সংস্কারের নামে শিক্ষক ও কমিটির মধ্যে টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়। এইদিকে অভিযোগ উঠেছে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সলিমুল্লাহর দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা তহবিল তছরুপের সুযোগ পাচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের তথ্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রদানের কথা থাকলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এই সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই। ফলে বিদ্যালয়ে লুটপাট নিয়মে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক তথ্য না দেয়ায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন করা হলে প্রধান শিক্ষকের কাছে তথ্য চেয়ে নোটিশ প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন মো. সলিমুল্লাহ। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সলিমুল্লাহ বলেন, আমার এখতিয়ার আছে কিন্তু পাওয়ার নেই। দেবীগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালে কখনো কোনো বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসেব চেয়েছেন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি। তথ্য প্রাপ্তির আপিলের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা তথ্য দিচ্ছেন না। আপনি সংবাদ প্রকাশ করেন। আমি সংবাদের কপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীন আক্তার বলেন, তথ্য কেন দিল না সেটা বলতে পারছি না। তথ্য লুকানো কোনোভাবে কাম্য নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।