দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ আগের মতো ঘোরে না কুমারপাড়ার চাকা
মৃৎশিল্পের জন্য একসময় নওগাঁর বেশ সুনাম ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া ও সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রীর ভিড়ে আজ বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। তাই বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার বা পালরা এ পেশা নিয়ে চিন্তিত।
ইতোমধ্যে অনেকেই বাপ-দাদার পেশাকে ছেড়ে অন্যপেশাকে বেছে নিয়েছেন। অনেকে আবার পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন। নওগাঁর পালপাড়া, রানীনগরের আতাইকুলা পালপাড়া, ভাণ্ডারগ্রাম পালপাড়া, ভাণ্ডারা পালপাড়া, পোরশার নীতপুর পালপাড়া, আত্রাই উপজেলার রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরে নয়নাভিরাম মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। একসময় এই গ্রামগুলো মৃৎশিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো নওগাঁয় হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্পী। বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার পুরোনো দৃশ্য। এক সময় এ শিল্পের কারিগররা দিন-রাত ব্যস্ত থাকতেন। সময়ের পরিবর্তনে কুমারপাড়ার চাকা আজ আর তেমনটি ঘোরে না। মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, সরা, বাসন, কলসি, বদনার কদর প্রায়ই শূন্যের কোটায়।
মহাদেবপুর উপজেলার ১০ নং ভীমপুর ইউনিয়নের খোদ্দনারায়নপুর পালপাড়া গ্রামের প্রায় ১৫০ ঘর মৃতশিল্পী বসবাস করে আসছে তাদের বাপদাদার আদীয় পেশা ছেড়ে দিয়ে অটোরিকশা চার্জার ভ্যান চালিয়ে জীবন যাপন করছেন আবার কেউ দিনমজুর কাজ করছে। হাতে গোনা কয়েকজন মৃতশিল্পীরা আজোও বাপদাদার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে ধরে রেখেছে পালপাড়ার জগদীশ চন্দ্র পাল মিঠুন পাল রনজিত কুমার পাল বিপ্লব পালসহ আরও অনেকে ।
মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকার নিরেণ কুমার পাল বলেন, “আগের মতো আর মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা নাই, ব্যবসাও নাই। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। তবুও বাপ-দাদার পেশা, তাই করতে হচ্ছে। অন্য কাজ তো করতে পারি না।”
বিরাজ নামের একজন জানান, আগের মতো মাটির তৈরি জিনিসপত্রের আর বেচা-কেনা নেই। আর্থিকভাবে তারা সমস্যায় আছেন। তবুও ঐতিহ্য ও বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে কাজ করছেন। সরকারি সহায়তা না পেলে গ্রাম-বাংলার পুরোনো এই ঐতিহ্য ধরে রাখা যাবে না। তাই এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে নওগাঁ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (বিসিক) উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মৃৎশিল্প কারিগররা যদি স্বল্প সুদে ঋণগ্রহণ করতে চায় তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেটার ব্যবস্থা করা হবে।