দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁঃ ওমানের জাতীয় টুপি তৈরি হচ্ছে নওগাঁয়। যা ওমানে কুপিয়া নামে পরিচিত। গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি এসব টুপি দেশে খুবএকটা চাহিদা না থাকলেও ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
সংসারের কাজের ফাঁকে টুপি তৈরি করে দরিদ্রতাকে জয় করেছেন গ্রামীণ নারীরা। এতে যেমন তাদের বাড়তি আয় হচ্ছে তেমনি দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।। বর্তমানে অনেক সচ্ছল পরিবারের নারীরাও বাড়তি আয়ের জন্য টুপি তৈরি করছেন। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন মধুবন, কুঞ্জবন, খাজুর, রনাইল, খোসালপুর, সুলতানপুর, উত্তরগ্রাম শিবগঞ্জ খোদ্দনারায়নপুর চৌমাশিয়া গোয়াল বাড়িসহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে সুই সুতোর দারুণ এই কর্মযজ্ঞ। টুপিতে নান্দনিক কারুকার্য ফুটিয়ে তুলছেন বিভিন্ন বয়সী গ্রামীণ নারীরা। প্রায় ৫০ হাজারের বেশি নারী এই টুপি তৈরির কাজে জড়িত। বছরজুড়েই এসব টুপির কাজ করলেও ঈদকে সামনে রেখে ব্যবস্তা বেড়ে যায় গ্রামীণ এসব নারীদের। সংসারে কাজের ফাঁকে সারা বছরই টুপির তৈরি করে বাড়তি আয় করে ছেলে মেয়েদের লোখাপড়ার পাশা পাশি সংসারের খরচে ব্যয় করে থাকেন এসব নারীরাব্যবসায়ীরা জানান, এই টুপি তৈরি করতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়। প্রথমে কাপড়ের থান থেকে টুপি মাপ মতো কাটা হয়।এরপর সেই কাপড়ে নকশা করা পলিথিন রেখে তেল ও বুলু (নীল রঙ) দিয়ে ছাপ দেওয়া হয়। বিভিন্ন ফুলের নকশা করা হয়। ছাপ দেওয়া নকশার ওপর মেশিন দিয়ে সেলাই করা হয়। এরপর ব্যবসায়ীরা এ টুপিগুলো গ্রামীণ নারীদের কাছে হাতের কাজ করতে দিয়ে আসেন। নকশার ওপর সুঁই এর সাহায্যে বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে ফুল তোলা হয়। সুঁইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নকশা ফুটে উঠে একেকটা কাপড়ে। বিশেষ কায়দায় সেলাই ও ভাঁজ করে এই কাপড় দিয়ে বানানো হয় ওমানের জাতীয় টুপি কুপিয়া। এরপর নারীদের হাতে তৈরি নান্দনিক কারুকার্য ফুটিয়ে তুলা বিশেষ ডিজাইনের এই টুপিগুলো চলে যাচ্ছে ওমানসহ বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যর দেশে।বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা বিদেশি ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার ছাপ দেওয়া বিভিন্ন রঙয়ের টুপির কাপড় ও সুতা কারিগরদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এরপর কয়েজননারীরা একত্রিত হয়ে গল্পে আড্ডায় এসব কাপড়ে সুঁই-সুতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তুলছেন। এ টুপিগুলোতে মূলত চেইন, বোতাম, দানা ও মাছ কাঁটাসহ কয়েক ধরনের সেলাই থাকে। প্রতিটি টুপিতে থাকে আলাদা নকশা। সুঁইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নকশা ফুটিয়ে তোলে মান ভেদে একটি টুপি এসব নারীরা পান ১৬ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। টুপিতে নকশা তৈরির কাজ করে একেকজন নারী মাসে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। তবে অনেক নারীদেরই অভিযোগ নায্যমূল্যে পাচ্ছেন না তারা।খোসালপুর গ্রামের জোসনা ও ফাতেমা বেগম বলেন, সংসারের কাজের সব কাজ শেষ করে সময় পেলে আমরা টুপির কাজ করি। ব্যবসায়ীরা শুধু টুপি দিয়ে যায়। এরপর বাড়ি থেকে সুঁই-সুতো দিয়ে বিভিন্ন নকশার কাজ করে দেওয় হয়। যে টুপিত শুধু সুতো ঢুকানোর কাজ করা হয় সেসব প্রতিটি টুপিগুলোতে ১৬ টাকা করে দেওয়া হয়। সপ্তাহে কেউ ৩০টা আবার কেউ ৪০টার মতো টুপির কাজ করতে পারে।এছাড়াও ডানা তোলা টুপিতে কাজ করলে ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে এই টুপিতে কাজ করতে ১৫ থেকে ১ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। স্থানীয় টুপি ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন বলেন, গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি হচ্ছে ওমানের জাতীয় টুপি কুপিয়া।