নওগাঁ পূর্ব শত্রুতা জের ধরে বোর-ইরি ধানের জমিতে পানি না দেওয়ার অভিযোগ

দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁঃনওগাঁর মহাদেবপুরে একটি সেঁচযন্ত্রের অপারেটরের বিরুদ্ধে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বোরোক্ষেতে সেঁচের পানি না দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। সেঁচের পানি না পেয়ে ওই কৃষক গত দুই বছর থেকে তার জমিতে ধান চাষ করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে একাধিকবার অভিযোগ দেয়া হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। প্রশাসন বলছে পানি না দিলে অপারেটরের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কিন্তু ওইক্ষেতে দ্রুত পানি সরবাহের ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের জোয়ানপুর আদিবাসী পাড়ার শ্রী বুদ্ধি ওড়াওয়ের ছেলে শ্রী ডালিম ওড়াও অভিযোগ করেন যে, দুই বছর আগে তিনি ওই গ্রামের মাঠে ১৬ শতক জমি কিনেন। ওই জমিতে আগে পাশের একটি বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকূপ এসটিডব্লিউ থেকে পানি সেঁচ দেয়া হতো। কিন্তু ওই এসটিডব্লিউ এর মালিক ওইগ্রামের বিষু ওড়াওয়ের ছেলে শ্রী মুহিত ওড়াও তার জমিতে সেঁচের পানি দিতে অস্বীকার করেন। ফলে গত দুই বছর থেকে ডালিম ওড়াও ওই জমিতে ধান চাষ করতে পারছেন না। এব্যাপারে তিনি তিন সপ্তাহ আগে উপজেলা সেঁচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য সচিব বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ এর সহকারি প্রকৌশলী, সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারা সকলেই মুহিত ওড়াওকে ওই জমিতে সেঁচের পানি দেয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু মুহিত কোনক্রমেই পানি দিতে রাজি হননি। কেউ এব্যাপারে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেননি। ফলে এবার ওই জমিতে ধান চাষ সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকের জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। শুধু ওই ১৬ শতক জমি রয়েছে অনাবাদি। অভিযুক্ত মুহিত উড়াওকে এলাকায় খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, তিনি পাশর্^বর্তী নিয়ামতপুর উপজেলায় চাকরি করেন। ওই এসটিডব্লিউ এর অপারেটর হিসেবে তার নাম থাকলেও বাস্তবে তার ভাইয়েরা সেটি পরিচালনা করেন। জানতে চাইলে মোবাইলফোনে মুহিতের ছোট ভাই মুনিম ওড়াও জানান, তাদের বিরুদ্ধে ডালিম ওড়াওয়ের চাচাতো বোন পানশরি ওড়াও নারী নির্যাতনের মামলা করে হয়রানী করায় তিনি তার জমিতে পানি দিবেন না বলে বিএমডিএ এর সহকারি প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আট বছর আগে মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ তুলে মুহিত ওড়াও ও তার ভাইয়েরা পানশরির বাড়িতে ঢুকে তাকে বেদম মারপিট করে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় স্থানীয় ইউপি সদস্য গ্রামে শালিস করে মুহিত ও তার ভাইদের অভিযুক্ত করে তাদের সাত হাজার টাকা জরিমানা করেন। তখনই বিষয় নিস্পত্তি হয়। আট বছর পর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সেঁচের পানি না দেয়া সমুচীন হয়নি বলে স্থানীয়রা মনে করেন। এবিষয়ে মুনিম আরো জানান, ওই জমিটি তার ভাই মুহিত ডালিমের চাচাতো বোনদের কাছ থেকে কেনার জন্য টাকা বায়না দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা জমিটি মুহিতকে না দিয়ে ডালিমকে রেজিষ্ট্রি করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে এজন্যই তারা ওই জমিতে সেঁচের পানি দিচ্ছেন না।জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে উপজেলা সেঁচ কমিটির সদস্য সচিব ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ মহাদেবপুর জোনের সহকারি প্রকৌশলী এমদুদুল ইসলাম জানান, এদিন উপজেলা সেঁচ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেউ জমিতে সেঁচের পানি না দিলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। মুহিত শেষ পর্যন্ত পানি না দিলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবেও জানান এই প্রকৌশলী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *