নওগাঁ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রামের জন্মতিথি উপলক্ষে রঘুনাথ জিউ মন্দিরে নবমী অনুষ্ঠিত

দৈনিক তালাশ ডটকমঃ নওগাঁ প্রতিনিধি উজ্জ্বল কুমার সরকার: নওগাঁর মান্দায় পাঁচশ’ বছরের পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ঠাকুর মান্দা শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দিরে রাম নবমী পূজা উপলক্ষে ঢল নেমেছিল হাজারো ভক্তের।

কীর্তন, প্রসাদ বিতরণ, ভক্তদের পুজো অর্চনা, ভোগ নিবেদন ও মানত দেওয়ার মধ্য দিয়ে উৎসব মুখর হয়ে উঠে এর চারপাশ। রামভক্তদের মিলনমেলায় পরিণত হয় মন্দির প্রাঙ্গণ। আত্রাই নদীর অন্যতম শাখা শিব নদী ও বিল মান্দার পশ্চিম তীরে অবস্থান এই মন্দিরটি।

নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

প্রায় পাঁচশ’ বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে মন্দিরটি। রাম নবমী উপলক্ষে চৈত্র মাসে রামের জন্ম তৃতীয়া শুক্লা তিথিতে আজ (৬ এপ্রিল) রোববার ভোরে মন্দিরে ভগবান শ্রী রাম চন্দ্রের বিগ্রহে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়।

এরপর তীর্থ যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নয় দিনব্যাপী চলবে এই অনুষ্ঠান। এছাড়াও রামনবমী উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন ঠাকুর দর্শন ও মানত করতে এতে এবারে সেই তুলোনায় কম।

তবে ভারোত থেকে এই রাম নবমীতে অনেক দর্শনার্থী আসতো তবে এবার সেই তুলোনায় ভারতের দর্শনার্থী নেই, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেশকিছু দর্শনার্থী এসেছেন এই মন্দিরে।

আগত ভক্ত দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মন্দিরের আশপাশের অন্তত এক কিলোমিটার এলাকা। এ উৎসবকে ঘিরে মন্দিরের পাশে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ মেলার। প্রথম দিনে নানা ধর্মের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।

স্থানীয় হেন্দু প্রবিন বৃদ্ধারা জানান, রাজখাড়া’ জমিদারি স্টেটের কাচারি বাড়ির ভগ্নাবশেষ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে রঘুনাথ মন্দিরের পাশে। কথিত আছে জনপদটিতে বাস করতেন দরিদ্র এক অন্ধ ব্রাহ্মণ।

তিনি রামভক্ত ছিলেন বিলে স্নান করতে নামলে রাম, লক্ষণ, সীতা ও হনুমানের কাঠের বিগ্রহগুলো ভাসতে ভাসতে তার শরীর স্পর্শ করে। তিনি প্রণাম করে মূর্তিগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরেন। পরে সেগুলো বাড়িতে স্থাপন করে পূজা-অর্চনা শুরু করেন। পুজাকালে একদিন হঠাৎ করেই দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান।

তার সংসারে সচ্ছলতাও ফিরে আসে। তখন থেকেই এই রঘুনাথ বিগ্রহের অলৌকিকত্বের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।বাড়তে থাকে ভক্তদের ভিড়।

এক পর্যায়ে কথাগুলো পৌঁছে যায় নাটোরের জমিদার রানী ভবানীর কানে। মন্দির দর্শনে এসে এর জীর্ণতা দেখে নিজেই মন্দির তৈরি করে দেন।

সেই প্রাচীনকাল থেকে আজও মন্দিরটির এই অলৌকিকত্বে বিশ্বাস করেন হিন্দু তথা অন্যান্য সম্প্রদায়ের অনেকেই। এই বিশ্বাসে রামনবমী পূজার দিনে জন্মান্ধ শিশুদের আনা হয় এখানে।

এই মন্দিরটি সতেরোশ’ ত্রিশ সালের দিকে নির্মিত করা হয়। পাল আমলের বিভিন্ন প্রত্ন নিদর্শন এই জনপদ থেকে আবিষ্কৃত হয়। এই জনপদটিতে হিন্দু তীর্থের প্রাচীন রঘুনাথ জিউ মন্দির হিসেবে পরিচিত।

হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও অন্য সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ তাদের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীসহ নানান রোগের আক্রান্ত সন্তানদের নিয়ে আসেন এই মন্দিরে। ছোট্ট শিশু থেকে নানা বয়সের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও নানান রোগের আক্রান্তদের সারা দিন রেখে দেয়া হয় মন্দির প্রাঙ্গণে একটি নির্ধারিত স্থানে।

পুণ্যার্থীরা একসময় মন্দিরের চারপাশের বিল ও শিব নদীতে গঙ্গাস্নান করে ভেজা কাপড়ে বিল থেকে পদ্মপাতা তুলে মাথায় দিয়ে মন্দিরে যেত ঠাকুর দর্শন করতে।

ভক্তরা আজো সেই রীতি-নীতি মানতে চান। কেউ কেউ আবার দুর্লভ পদ্মপাতা সংগ্রহ করে তা মাথায় দিয়ে তার ওপর মাটির পাতিল বোঝাই ভোগের মিষ্টান্ন মাথায় নিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে প্রভুর চরণে নিবেদন করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি ভারত থেকেও আসেন হিন্দু পুণ্যার্থীরা । ভক্তবৃন্দের ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *