দৈনিক তালাশ.কমঃ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন বলেন, এলাকা ভিত্তিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা আপনাদেরই করতে হবে। পুলিশ তো কিছুই করতে পারে না, কারণ শেখ হাসিনা পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিল। পুলিশ বাহিনীর জনগণের দুশমন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার করেছে। ৫ তারিখ ফ্যাসিস্ট সরকার হাসিনার সাথে পুলিশদের ও পরাজয় হয়েছে। এখন তাদের মন মেজাজ ভালো না। অনেক থানায় নতুন কর্মকর্তা এসেছে কিন্তু তাদের এখন আর ঐ রকম সাহস নেই বলেই বিচার চাইতে গেলেও বিচার পাওয়া যায় না। তাই গ্রামের মধ্যেই বিচার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুলিশের কাছে যাওয়া দরকার নেই। টাকা পয়সা খরচ, দৌড়াদৌড়ি, হয়রানি হতে হয়।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন গিয়াসউদ্দিন।
এসময় তিনি আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরে আমি অনেক জায়গায় আসতে পারিনি। আমার স্ত্রীর কবর আমি দিতে পারিনি। কিন্তু এই এলাকায় কিছু কুলাঙ্গারের সন্তান ছিল যারা গডফাদারের মদদে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছে। তারা আজ পলাতক, তবে তারা যে অর্থ লুটপাট করেছে, সেগুলো দিয়ে আবার তারা কিছু চেষ্টা করতে পারে। আমাদের সে বিষয় সজাগ থাকতে হবে। যারা হোন্ডাবাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে অন্যায় করেছে তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। আজ আপনারা নারায়ণগঞ্জের বাইরে কোথাও গিয়ে যদি আমার পরিচয় দেন তাহলে সম্মান পাবেন। আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না, অন্যায় করিও না, অন্যায়কে আমার সাথে চলতেও দেই না। এত অত্যাচার সহ্য করে আন্দোলনের পর মহান আল্লাহ আমাদের ৫ আগস্ট বিজয় দিয়েছেন। স্বৈরাচারী সরকারের শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে গেছে, এক মুক্ত আকাশ-বাতাসের মাঝে দাঁড়িয়ে আজ কথা বলতে পেরে ভালো লাগছে। কিন্তু কিছুদিন আগে এই ব্যাপারগুলো কল্পনাও করা যেত না। আজকের অনুষ্ঠানের আগেও এই এলাকায় সভা হয়েছিল, সেখানে এসে দেখতে পারেছি মানুষ কতটা হাসিখুশি এবং প্রাণবন্ত হয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার যাওয়ার পর।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ছোট থেকে এখানে আলো বাতাস আমি বড় হয়েছি। ছাত্র জীবনে বৃহত্তর ইউনিয়ন পরিষদের দুই দুইবার চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন আপনারাই। সেই সাথে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে আপনারা আমাকে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও বানিয়েছেন। ২০০১ সালে আমাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন। সেই থেকে মাদকের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমার আন্দোলন সংগ্রামে এই এলাকার অনেক মানুষ আমাকে সহযোগিতা করেছেন। বিএনপির মতো জনপ্রিয় দল বাংলাদেশে আর কোনটি নেই ছিলও না। বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক জেলার মানুষ এই এলাকায় এসে বিভিন্ন চাকরি-ব্যবসার সুবাদে বসবাস করে। তারা আমাদের নিত্যদিনের মেহমান। এখানে আমাদের নতুন একটি সমাজ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, নবীন ও প্রবীণ এর সংমিশ্রনে আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থাকে সুন্দর করতে হবে। যে সমাজে একজন মানুষ অন্য মানুষকে সম্মান করবে, ভালবাসবে ও দুঃখ কষ্টের পাশে থাকবে অন্যায়, মাদক, জুলুম থাকবে না তখনই সেই সমাজকে একটি সুন্দর সমাজ বলা যাবে। এখানের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা করবো, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা সেখানেই সুস্থ সুন্দরভাবে লেখাপড়া করতে পারে। এলাকার প্রতিটি সন্তান আমাদের, কারো যদি লেখাপড়া করতে সমস্যা হয় তাহলে আমাদের সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শিক্ষা ছাড়া একটি সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। কিছু সময় দেখা যায় সন্তান বড় হলে পিতা-মাতার কথা শোনে না, পিতা মাতা এক পর্যায় ওই সন্তানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। সে অসহায় পিতা-মাতার কাছে আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন ওই সন্তানকে সাইজ করতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে নারায়ণগঞ্জ একটি গডফাদার তৈরি হয়েছে। এখানে একটা সংগঠন করা হয়েছিল, কিন্তু সেই সংগঠনের পয়সা ছাড়া কোনো বিচার করা হতো না। গরিব অসহায়রা কোন বিচার পেত না। এখন তারা পলাতক। আমি অনুরোধ করবো, যারা এলাকার মুরুব্বীদের সম্মান করতে পারে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাদের বিচার করতে দিতে হবে।