দৈনিক তালাশ.কমঃ সোমবার (২৪ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) উম্মে সারবান তাহুরার আদালতে তাকে হাজির করা হয়। এদিন আদালতে দুই জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন। সাক্ষীরা হলেন, মামলার ৭ নম্বর সাক্ষী নজরুল ইসলাম ও ৮ নম্বর সাক্ষী সাব্বির আলম খন্দকারের বিয়াই শফীক খন্দকার।
আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের প্রায় ঘন্টা খানেক সময় ধরে জেরা করেন। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুনরায় নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামী জাকির খানকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এসময় জাকির খানের কর্মীসমর্থকরা ভীড় জমালে এবং জাকির খানের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেন।
পরে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন আসামী পক্ষে আইনজীবী রবিউল হোসেন। তিনি সাক্ষীদের জেরা বিষয়ে তিনি বলেন, আজ সাব্বির হত্যা মামলায় দুই জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছে। তারা হলো একজন সাব্বির আলম খন্দকারের বিয়াই শফীক খন্দকার ও আরেকজন নজরুল ইসলাম। তারা আদালতে বিশেষ কিছু বলতে পারেনি। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই আমাদের ক্লায়েন্ট বেকসুর খালাস পাবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসামী পক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, এ মামলার পরবর্তি তারিখ ৩রা জুলাই । সেদিন আরও অনেক সাক্ষী আসবে, আমরা তাদেরও জেরা করবো।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে আসামী পক্ষের সহকারি আইনজীবী রাজীব মন্ডল বলেন, আজ সাব্বির হত্যা মামলার ৭ নম্বর সাক্ষী নজরুল ইসলাম ও ৮ নম্বর সাক্ষী সাব্বির আলম খন্দকারের বিয়াই শফীক খন্দকার আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। মামলার ৭ নম্বর সাক্ষী নজরুল আদালতকে বলেছেন, সাব্বির হত্যাকান্ডের আগে তিনি তার বাড়ীর ছাদে কবুতরকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন। হঠাৎ গুলি শব্দ শুনে তিনি ভেবেছিলেন কেউ বোমা ফাটাচ্ছে। তাই তিনি বকঝোকা করে নিচে নেমে দেখেন দুই জন ব্যক্তি সাব্বির আলমকে গুলি করে পালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একজন মোটা ব্যক্তি, অপরজন চিকন ব্যক্তি। তবে আজকে আদালতে হাজির হওয়া আসামীদের সাথে সাক্ষীর দেখা ব্যক্তিদের মিল নেই। আজ যেসকল আসামীরা হাজির ছিলো, তাদের কাউকেই সেদিন (হত্যাকান্ডের সময়) তিনি দেখেন নাই বলেও জানিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট রাজীব আরও বলেন, ৮ নম্বর সাক্ষী সাব্বির আলম খন্দকারের বিয়াই শফীক খন্দকারও গুলি শব্দ শুনে বাসা থেকে বের হন। তিনি বাসা থেকে বেড়িয়ে দেখেন সাব্বির আলমকে কে বা কাহারা গুলি করে হত্যা করেছে। পরে তিনি সাব্বির আলম খন্দকারের ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে ডেকে নিয়ে আসেন। তবে তিনি কাউকে গুলি করতে দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
এর আগে জাকির খানকে আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয় হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসময় পুরো আদালতপাড়া থেকে বহিরাগতদের বাহির করে দেয়া হয়। প্রয়োজন ছাড়া আদালতপাড়ায় প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি অনেককে। ফলে আদালতপাড়া অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর প্রহরায় জাকির খানকে আদালতে হাজির করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার। এ হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমূর আলম বাদি হয়ে ১৭ জনকে আসামী করে ফতল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়।
সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন। এতে মামলা থেকে গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামী উল্লেখ করা হয়।
মামলার প্রধান আসামী গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেয়ায় মামলার বাদি তৈমূর আলম খন্দকার সিআইডির দেয়া চার্জশীটের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারী আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।
নারাজি পিটিশনে তৈমুর আলম বলেন, গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকান্ডের মূল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি গোজাঁমিলের চার্জশীট দাখিল করেছেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।