দৈনিক তালাশ.কমঃ ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চান। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেটা সারা বিশ্বে ঘটতে যাচ্ছে। এটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি ডিজিটাল এবং একটি স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা একান্তভাবে অপরিহার্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল জরিপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে চাই।
বাংলাদেশে ডিজিটাল জরিপের লক্ষ্য হচ্ছে, ‘১ ব্যক্তি, ১ খতিয়ান ও ১ দাগ’ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর বাস্তবায়ন ঘটলে ভূমি বিষয়ক নাগরিকদের হয়রানি এবং মামলা-মোকদ্দমার পরিমাণ অনেকাংশে কমবে।
কোথাও যদি দেখেন কেউ স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার কারণে আপনাদের ভূমি বঞ্চিত করছে। সেক্ষেত্রে আপনারা অভিযোগ করবেন। আমরা সেগুলো তদন্ত করব এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসক এটার সমাধান দিতে পারবেন। আমি আশা করব, এটা সেই পর্যায়ে সমাধান হবে। সর্বোপরি ডিজিটাল ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে কেউ অধিকার বঞ্চিত হলে আমরা দেখব।
আগামী জুলাই থেকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের ছয়টি এলাকায় বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপের আওতায় ম্যাপ প্রস্তুতকরণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা দ্রুত সফলভাবে শেষ হবে। যোগাযোগ ও প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিডিএস অপারেশনে নাগরিকদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) আওতাভুক্ত অন্যতম ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ প্রকল্প সেমিনারটি আয়োজন করে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। ইডিএলএমএস প্রকল্প পরিচালক মো: জহুরুল হক বিডিএস বিষয়ে এক সচিত্র উপস্থাপনা করেন।
এ সময় ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে এ দেশ পেয়েছি, আমরা এই ভূমি পেয়েছি। মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট আবেগ ছিল। কৃষকসহ সবার জন্য এক খণ্ড জমি তাদের কাছে মূল্যবান।
তিনি স্বল্প সময়ে তার স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি। তার সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি দেশকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই একটি ফ্রেশ ও সুন্দর ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসতে। আমরা চেষ্টা করছি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ডিসি এবং ভূমি পর্যন্ত যাওয়ার। ভূমির ক্ষেত্রে সব কর্মকর্তাদের মাঝে আজকে আমার বার্তাটাও থাকবে তাদের সিনসিয়ার এবং সৎ হয়ে চলতে হবে।
এখানে যদি কোনো ত্রুটি ঘটে এবং প্রমাণিত হয় সেখানে কিন্তু কঠিন আইনগত ব্যবস্থা নিব। সে ক্ষেত্রে আমরা ছাড় দিব না।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমি বলছি না আমাদের কোথায়ও কোনো ত্রুটি নেই। ত্রুটি আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের ভিতর রয়েছে আবার জমির মালিকদের রয়েছে। অবৈধ সুযোগ নেওয়ার জন্য পয়সা দিতে থাকে। আমি চেয়ারে বসে দেখেছি কেউ চাকরির জন্য বলে স্যার যা লাগে টাকা-পয়সা দিব নে।
চাকরির আগে বলে টাকা দিব নে। পাবলিকেরও কিন্তু সিনসিয়ার হতে হবে। কেন টাকা দিয়ে আমি চাকরি নিব। কেন টাকা দিয়ে আমি রেকর্ড করব। রেকর্ড আমার বৈধ যতটুকু সেটুকু আমার অধিকার। সেই অধিকার বঞ্চিত হলে আমরা দেখব আমরা কথা দিচ্ছি।
এসময় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালে প্রদত্ত ৩১টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অন্যতম বাস্তবায়ন হিসেবে ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন ও বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমি সম্পর্কিত লেনদেন অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ায় দুর্নীতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমে এসেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সেমিনারে বলেন, বিডিএস অপারেশনে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হবে। জরিপের সময় যদি সিলিং বহির্ভূত জমি পাওয়া যায়, তাহলে অতিরিক্ত জমি খাস খতিয়ানে এনে বাকি জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হবে। আর সরকারি জমির ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতের রায় অনুযায়ী কাজ করা হবে।
তাছাড়া বিডিএস-এর আওতায় তৈরিকৃত ডিজিটাল ম্যাপে ক্লিক করলেই জমির সব তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়াও রেকর্ড সংশোধন করলে ডিজিটালি ম্যাপ পার্টিশন হয়ে যাবে।
সেমিনারে ডিএলআরএস পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদের শেখ, ডিএলআরএস পরিচালক মো. মোমিনুর রশীদ, ঢাকার জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো: মিজানুর রহমানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ও ইডিএলএমএস প্রকল্প এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এবং দক্ষিণ কোরিয়া হতে আগত প্রকল্পের সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইসহ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরবৃব্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুধীজন, অংশীজন, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ।