দৈনিক তালাশ.কমঃ তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং তাকে পরিকল্পিভাবে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই দাবি করেন। এসময় তার স্ত্রী, সন্তান ও তার আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
যদিও গত বছরের অক্টোবরে আকষ্মিকভাবে রূপগঞ্জে তৎপরতা শুরু করেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রূপগঞ্জ পাল্টে দিবেন, কোন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভুমিদস্যুতা থাকবে না বলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। কিন্তু তার লম্ফঝম্ফ হাস্যরসের সৃষ্টি হয় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে। তবে নাটকীয়ভাবে দ্বাদশ নির্বাচনের আগমুহুর্তে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। তাকে আর খুঁজে পায়নি রূপগঞ্জের মানুষ। জাতীয় নির্বাচন শেষ হলো। সামনে উপজেলা নির্বাচন। আবার মাঠে সক্রীয় হলেন চতুর আলোচিত-সমালোচিত ক্যাসিনো সম্রাট ডন সেলিম। এবার তার মিশন কি, হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে তাও পরিস্কার হবে রূপগঞ্জবাসীর কাছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, আমি সেলিম প্রধান নারায়ণগঞ্জের সন্তান। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। একটি বাহিনীর সাবেক প্রধান কর্মকর্তার দুই ভাই (হারিছ আহমেদ ও জোসেফ আহমেদ) পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল জাজিরায় তাদের নিয়ে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে হারিছ স্পষ্ট করে বলেছে, আমাকে কিভাবে ফাঁসানো হয়েছে, কিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে র্যাব দিয়ে আমাকে প্লেন থেকে আটক করা হয়েছে। অথচ এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করার মানে হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আইনি কোন মামলা বা জটিলতা নেই। তারপরও আমাকে প্লেন থেকে গ্রেফতার করে পরিকল্পিতভাবে নাটক সাজিয়ে গ্রেফতার করেছে। আমার বিরুদ্ধে অর্থ পাঁচারের অভিযোগ তোলা হয়। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে চার বছর একদিন জেল খাটিয়েছে। আমি ওই ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চাই। আমি জেল থেকে বের হয়ে এই ষড়যন্ত্রের কথা গণমাধ্যমে বলে এসেছি। এমনকি জেলে আটক থাকা অবস্থায়ও বলেছি। তারপরও আমার নিরপরাধ হওয়ার নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। এসব সম্পন্ন করে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।
এদিকে দীর্ঘ কারাভোগের পর নতুন রূপে ফিরে এসে গত বছরের ২১ অক্টোবর দিনভর তিনি বেশ কয়েকটি পূজামন্ডপ ঘুরে ঘুরে তার উপস্থিতি জানান দিয়েছেন এলাকাবাসীর মধ্যে। কোলেরর শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষদের বলছেন রূপগঞ্জকে তিনি পাল্টে দিতে চান। কাউকে কোন খারাপ কাজ করতে দিবেন না। এমপি নির্বাচনও করবেন না। তিনি গরীব-নিরিহ মানুষের পক্ষে থাকবেন। তার এমন কথা আর আচরনে এলাকার মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শুধু তাই নয়, রূপগঞ্জে জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম প্রধান ওই সময় সংবাদিকদের বলেন, আমি রূপগঞ্জকে পরিবর্তন করবো, আপনাদের সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। তবে আমি রাজনীতি করবো না, এমপি নির্বাচনও করব না। অনেক দিন পর আমি এলাকায় এসেছি। আমার এলাকায় অনেক ভালো কাজ হয় আবার খারাপ কাজও হয়। রূপগঞ্জ উপজেলাকে পরিবর্তন করতে বাকি জীবন এলাকাতেই থাকব, সময় কাটাব।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতি করার ইচ্ছা আমার নেই। এটা এক ধরনের জব। আমি চাই মানুষ যা চায় তা যেন পায়। জনগণ মনে করেন আমি ভোটটা দিলাম আপনারা আমাদেরকে দেখবেন। অথচ ভোট পাওয়ার পরে গরীব নিরীহ মানুষের খবর আর কেউ নেয় না।
ওই সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রূপগঞ্জে সেলিম প্রধানের আকষ্মিক বিচরণ তখন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল জনমনে। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের সময় তাকে আর দেখা যায়নি।
ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের পৈতৃক বাড়ি রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা মর্তুজাবাদ এলাকায়। এলাকায় তাঁদের বাড়িটি ‘মিয়া বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত।। সেলিম প্রধানের বাবা নান্নু মিয়া ভুলতায় একসময় কাপড়ের ব্যবসা করতেন।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, সেলিম প্রধানের বাবা একসময় ঢাকায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। এর পর থেকে এলাকার সঙ্গে তাঁদের পরিবারের যোগাযোগ খানিকটা কম। নান্নু মিয়ার তিন ছেলে, তিন মেয়ের জনক। ছেলেদের মধ্যে সেলিম তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। নান্নু মিয়া ১৯৮৮ সালে তাঁর বড় ছেলে আলম মিয়াকে জাপান পাঠান। বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সেলিম প্রধানও পরে জাপানে চলে যান। সেখানে তিনি পড়াশোনা ও কাজ করতেন। জাপানি এক নারীকে তিনি বিয়ে করেন।
মর্তুজাবাদে সেলিম মিয়ার প্রতিবেশীদের তথ্যমতে, জাপানে থাকার সময় সেলিম প্রধান তাঁর ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। পরে তাঁর ব্যবসার প্রসার আরও বাড়তে থাকে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের জেবি সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড।