দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকারঃ ছয় বছর পর কবর থেকে উঠে এসে নিয়োগ বোর্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করলেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার গয়ড়া তেতুলিয়া ডি এ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ। এছাড়াও নিয়োগ বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিন পদে নিয়োগ দেয়ার অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন দাউদপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সেকেন্দার আলী ও তৎকালীন সভাপতি শহিদুল ইসলাম। তারা কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার নিয়োগ দেখান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ.টি.এম জিল্লুর রহমান। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি দাউদপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার নিরাপত্তা কর্মী, আয়া, সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগারসহ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে উপরের তিনটি পদ শূন্য হলেও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আসাদুজ্জামান নামের একজন কর্মরত আছেন। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৮ মার্চ তারিখ দেখিয়ে নিয়োগের কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। সেই কাগজপত্রে দেখা যায় পার্শ্ববর্তী গয়ড়া তেতুলিয়া ডি এ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ সেই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসাবে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু তিনি ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এরপর ওই বছরের মে মাসের ৫ তারিখে ঐ মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন আ.ন.ম. লুৎফর রহমান।
মাদ্রাসার রেজুলেশন ও নিয়োগ বোর্ডের ফলাফল সিটে আবদুর রশিদ ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ.টি.এম জিল্লুর রহমান ও ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোবারুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। সেই নিয়োগ বোর্ডের সম্পর্কে ওই কর্মকর্তাগণ কিছুই জানেন না বা কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেননি। অথচ নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, নিরাপত্তা কর্মী পদে উপজেলার দাউদপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে ইসাহাক আলী, আয়া পদে দাউদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম মাস্টারের মেয়ে শারমিন সুলতানা ও সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদে নিয়োগ পেয়েছেন মাধবপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আবু মুস্তাকিম। যারা এখন পর্যন্ত মাদ্রাসায় কোনো দিন যাননি বা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেননি। এরমধ্যে আয়া পদে শারমিন সুলতানার বেতনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন মাদ্রাসার সুপার।
তৎকালীন সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রথম জমি দিয়েছেন এবং তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০২০ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত তিনি সভাপতি ছিলেন। তাঁর মেয়াদ শেষের ১০/১২ দিন আগে সন্ধ্যার পর তৎকালীন এমপি ও বর্তমান (সাবেক) ছলিম উদ্দিন তরফদার তার কয়েক জন নেতা কর্মিকে দিয়ে বাসায় আমাকে ডেকে নেন।ডেকে নিয়ে এমপি সরাসরি বললেন আপনার মাদ্রাসায় নিয়োগ আছে আপনি একজনকে চাকুরী দেন আমি একজনকে দিব। তখন আমি আমার মেয়েকে মাদ্রাসায় আয়া পদে দিতে চাইলাম আর এমপি শিক্ষক শরিফুর ইসলামের ভাতিজাকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে টাকা পয়সা নেন। আমার কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারনে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। এর পর মাদ্রাসায় এডহক কমিটির আহ্বায়ক হন নিয়োগ প্রাপ্ত মুস্তাকীমের বাবা আব্দুস সাত্তার। দ্বিতীয় দফায় এডহক কমিটির আহ্বায়ক হন মেহেদী হাসান। এরই মাঝে চলছে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন ও নিয়োগ পত্র তৈরীর কাজ। ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়েছে ২০২০ ইং সালের ১৮ মার্চ। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে ৬ বছর পূর্বে মারা গিয়েছে গয়ড়া তেঁতুলিয়া মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আবদুর রশিদকে। বিষটি নিয়ে এলাকায় তোরপার সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে যাদের চাকুরী প্রত্যাশী প্রার্থী রয়েছে তাঁরায় ভুয়া নিয়োগ বোর্ড তৈরীর মুল হোতা। এ বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ.টি.এম জিল্লুর রহমান বলেন, আমি ওই উপজেলায় থাকতে এই পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে গতবছর তারা আমার কাছে এসেছিলো ব্যাকডেটে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য। আমি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু জানি না। বিষয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদে নিয়োগ আবু মুস্তাকিম বলেন, আমি কোনো নিয়োগ বোর্ডে বসিনি। আমার কাছে টাকা আর কাগজপত্র চেয়েছিলো, সেগুলো আমি দিয়েছিলাম। আমি শুধু যোগদান পত্রে স্বাক্ষর করেছি। সেই যোগদানপত্র সুপার আমাকে দিয়েছেন। এ বিষয়ে মাদরাসার সুপার সেকেন্দার আলী বলেন, আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। কে বা কারা তা করেছে সেটা আমি জানি না। তবে এ বিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি।
বর্তমান বদলগাছী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার সন্দেহ হয়েছিলো এটা ভুয়া নিয়োগ তাই আমি বিলের আবেদনটি আটকে দিয়েছি। এ বিষয়ে একটি অভিযোগও পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই নিয়োগের ডিজির প্রতিনিধি জেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার মোবারুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়টি আমি জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।