আত্রাই ফুলবাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধটি দীর্ঘ ৮ বছরেও সংস্কার হয়নি

দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকারঃনওগাঁ জেলা শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার দক্ষিণে আত্রাই উপজেলায় গত ১৫ সালে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের ফলে ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী শাহাগোলা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বড়িবাঁধ বন্যায় বিধস্ত হয়। বাঁধটি বিধস্ত হওয়ার র্দীঘ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও করা হয়নি নতুন সংস্কার। দীর্ঘ আট বছর পেরিয়ে গেলেও যখন বাঁধটি সংস্কারে কোন দপ্তরের মাথা ব্যাথা নেই ঠিক তখনই স্থানীয়দের কাছে প্রশ্ন জাগে আসলে বাঁধটি সংস্কারের দায়িত্ব কার? বাঁধটি সংস্কারের জন্য স্থানীয়রা ইউনিয়ন পরিষদের দপ্তরে গেলে তারা বলেন বাঁধটি সংস্কারের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। পানি উন্নয়নের কাছে গেলে তারা বলে এটি ইউনিয়ন পরিষদে। এভাবেই সময় গড়িয়ে ৮টি বছর অতিবাহিত হলেও আজও সংস্কার হয়নি বেঁড়ি বাঁধটি।বাঁধটি সংস্কার না করার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই সারাটা বছরজুড়ে জলাবদ্ধতার মাঝে থাকতে হয় ফুলবাড়ী ও পূর্ব মিরাপুরের শত শত পরিবারকে। যাতায়াতের জন্য নৌকা হচ্ছে তাদের এক মাত্র অবলম্বন। বর্ষা মৌসুম ওই এলাকার হাজার হাজার কৃষক তাদের আবাদি ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্য থাকতে হয়। জানা যায়, গত ১৫ সালের ২৩ আগস্ট ভোর রাতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আত্রাইয়ের ফুলবাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার পর মির্জাপুর নামক স্থান আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক ভেঙ্গে আশপাশের এলাকার সমুদয় ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেই সাথে এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। এতে আত্রাই -রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রায় ২ মাস পর বন্যার পানি নেমে যায়। এদিকে বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার ৮ বছর হলেও আজও ভাঙ্গন মেরামত করা হয়নি। এ ভাঙ্গন মেরামত না করায় যোগাযাগের অত্র এলাকাবাসী চরম দুর্ভাগ পোহাতে হচ্ছে জয়পুর, রাইপুর, ডাঙ্গাপাড়া, ফুলবাড়ি, পূর্বমিরাপুর, উদনপয়সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার ভবানীপুর-মির্জাপুর হাটে যাতায়াতের জন্য এ পথ ব্যবহার করতে হয়। তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ পথ দিয়েই হাট বাজার করতে হয়। বন্যায় বাঁধ বিধস্ত হওয়ার পর থেকে তারা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে বাঁধটি মেরামত না করার ফলে আগামী বন্যা মৌসুমে আত্রাই-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়ক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পরবে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল। উদনপয় গ্রামের সাবেক মেম্বার জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা এ ভাঙ্গন মেরামতের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারসহ এলাকার জনগণ বিভিন্ন মহলে অনেক বার অনেকের কাছেই ধর্না দিয়েছি। সকলেই আশ্বস্ত করেন কিন্তু আজও মেরামত না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের আগেই সেখান পানি বন্ধী হয়ে পড়তে পারে অসংখ্য পরিবার। বর্তমানে বাঁধটি মেরামত করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে ফলে আমরা আমাদের কষ্টের ফসল নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছি। জিতু খন্দকার বলেন, আসন্ন বন্যা মৌসুমের আগে বাঁধটি মেরামত না করার ফলে আমাদের মাঠে কোন আবাদ করতে পারিনি। কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা ও জেলা শহরের সাথে যোগাযাগের দিন দিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে। তিনি দ্রুত বাঁধটি নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে ভবানীপুর পিএস ল্যাবরেটরী কিন্ডারগার্ডেন স্কুল এন্ড হাই স্কুলের অধ্যক্ষ অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, গত ১৫ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফুলবাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার ফলে এ রাস্তার উপর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধটি সংস্কার করা অতিব জরুরী। এ ব্যাপার সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মামুনুর রশিদ বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটি সংস্কার না করার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কোমলমতি শিশু, বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে। তিনি আরোও বলেন, বাঁধটি সংস্কার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। এ প্রসঙ্গে নওগাঁ পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফাইজুর রহমান বলেন, আমার জানামতে আত্রাইয়ের ফুলবাড়ি নামক স্থানে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন বাঁধ নেই। তবে আগে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় বাঁধটি নির্মাণ করেছিলো। বাঁধটি কোন দপ্তরের আওতাই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ইউনিয়ন পরিষদর আওতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *