দৈনিক তালাশ.কমঃরমজানে বেশি চাহিদা থাকে এমন চার নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিষয়টির কোনো অগ্রগতি নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো এ নির্দেশনা পরিপালনে এনবিআরের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।
পণ্যগুলো হলো- চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুল্ক কমানোর জন্য এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি এনবিআর। কোন পণ্যের শুল্ক কতটুকু কমানো যৌক্তিক হবে- এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। এ বিষয়ে কোনো কথা বলছেন না সংস্থাটির কেউ। বিষয়টির জন্য যোগাযোগ করা হলেও এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম কোনো বক্তব্য দেননি।
চার পণ্যের শুল্ক কমাতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দেখছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। তবে সময় লাগবে। কোন পণ্যের কতটুকু শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে সেটার যৌক্তিকতার বিষয় রয়েছে।
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও শুল্ক কমানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করছেন খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের যুগ্ম-সচিব আবদুছ সামাদ আল আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এনবিআর থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, এরপরেও আমরা কীভাবে বিষয়টি দেখবো বলেন। এ ইস্যুতে মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরে চিঠি দেওয়া হয়েছে গত সপ্তাহে। তবে এখনো কমেনি শুল্ক।
তিনি বলেন,তারা দেখছে, দেখুক। তারপরেও হয়তো হবে। তবে এখনো কিছু চূড়ান্ত জানি না।’
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন। ওই সময় এনবিআরকে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমানোর প্রস্তাবে সম্মতি প্রধানমন্ত্রীর
দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত ডিসেম্বর মাসের হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। মাসটিতে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ এক বছর আগের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মানুষকে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় তেমন বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন করে তুলছে। কোনো ব্যবস্থাই বেশির ভাগ পণ্যের মূল্য কমাতে পারছে না। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল সাধারণ মানুষ। যার বাস্তবায়ন থেমে আছে।
পবিত্র রমজান সামনে রেখেই এই চার পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আগামী মার্চের ১১ তারিখ থেকে রোজা। এই ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি আমরা শুল্ক সুবিধায় পণ্য আনতে না পারি তবে এ উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।- সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা
এখন পর্যন্ত এনবিআর শুল্ক কমাতে কী ধরনের কাজ করেছে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত একটি খসড়া সারসংক্ষেপ তৈরি হয়েছে। যাতে চালের আমদানি শুল্ক বিদ্যমান ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, চিনি আমদানিতে টনপ্রতি এক হাজার টাকা কর কমানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া খেজুরের আমদানি কর বিদ্যমান ৫৮ শতাংশ থেকে প্রায় ১৫ শতাংশে কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। ভোজ্যতেলে বড় ধরনের কর কমানোর কথা বলা হলেও তেল নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কাজই হয়নি।
বাড়বে সংসার খরচ, আরও চাপে পড়বে স্বল্প আয়ের মানুষ
এসব বিষয়ে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরেও এতদিনে শুল্ক কমেনি, কোনো এসআরও জারি হয়নি- এটি দুঃখজনক।
তিনি বলেন‘পবিত্র রমজান সামনে রেখেই এই চার পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আগামী মার্চের ১১ তারিখ থেকে রোজা। ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি আমরা শুল্ক সুবিধায় পণ্য আনতে না পারি তবে এ উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।
বিশ্বজিৎ সাহা বলেন,এখনো আমরা আগের ডিউটি দিচ্ছি। এখন যেসব পণ্য আসছে সেগুলোও রোজার পণ্য। তাহলে বাড়তি ডিউটি দেওয়া এসব পণ্য কীভাবে কম দামে বিক্রি করবো।