দৈনিক তালাশ.কমঃ সিলেটের জৈন্তাপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চার ছাত্রলীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছেন স্থানীয়রা। দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের অসহযোগিতা ও গ্যারেজে অ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্ত্বেও তাৎক্ষণিক রোগী পরিবহনে না দেওয়ায় এ হামলা চালানো হয়।
স্থানীয় ও জৈন্তাপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাইভেটকার খাদে পড়ে হতাহতদের উদ্ধার করে শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাত ১টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয়রা। এ সময় চিকিৎসকরা দেরিতে এসে গুরুতর আহতদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা শুরু করেন। চিকিৎসায় বিলম্ব ও হাসপাতালে অক্সিজেন না থাকায় স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা হতাহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
এ সময় স্থানীয়রা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাম্বুলেন্স চাইলে তারা জানায় হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নেই। পরে হাসপাতালের গ্যারেজের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে সেটি ভাঙচুর করেন ও অগ্নিসংযোগ করেন।
এ সময় হাসপাতালের জানালার গ্লাস ও কোয়ার্টারের গ্যারেজে থাকা ডাক্তারের ব্যবহৃত একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে অ্যাম্বুলেন্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
তবে রোগীদের অসহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, বিষয়টি ভিত্তিহীন। রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসার পর আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দ্রুততম সময়ে করেছি। আমাদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে প্রমাণ মিলবে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে দুই দফায় দুইজন করে রোগী নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। চারজনকেই মৃত অবস্থায় পেয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। এরপরও রোগীদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। প্রথম দুইজনকে একটি প্রাইভেট গাড়িতে করে সিলেটে নিয়ে যাওয়ার পর আরও দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। ওই দুজনকেও মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় স্থানীয়রা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চাইলে আমাদের চালক না থাকায় দেওয়া যায়নি। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় জনতা এসে হাসপাতাল ভাঙচুর শুরু করেন ও গ্যারেজে থাকা একটি জিপ গাড়িতে আগুন দেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, হতাহত চারজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ভাঙচুর ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১২টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার সিলেট-তামাবিল সড়কের লক্ষ্মীপুর এলাকার আড়পাড়া জামে মসজিদের সামনে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি খাদে পড়ে চার ছাত্রলীগ কর্মী প্রাণ হারান।
নিহতরা হলেন, উপজেলার নিজপাট পানিয়ারা হাটি গ্রামের রনদীপ পালের ছেলে নিহাল পাল (২৬), নিজপাট তোয়াশিহাটি গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে জুবায়ের আহসান (২৬), নিজপাট পানিয়ারাহাটির আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান তমাল (২৫) ও নিজপাট জাঙ্গালহাটি গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে সুমন আহমদ (২৫)।