দৈনিক তালাশ ডটকমঃ আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর নাজিম উদ্দিনের অত্যাচার ও হয়রানি থেকে বাচতে এক ভূক্তভোগী প্রবাসী দম্পত্তি সংবাদ সম্মেলন করেছে বুধবার (১৩ আগষ্ট) দুপুর ১২ টায় নগরীর চাষাড়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ভূত্তভোগী দম্পত্তি মার্জিয়া খাতুন (৪২) এবং তার স্বামী মোঃ শাহাবুদ্দিন সরকার লিখিত বক্তব্য পাঠ করে জানান, তারা সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এনায়েত নগর এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছেন। অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিন (৬৫), পিতা- মৃত মোহর আলী, সাং- নতুন আইলপাড়া, পাঠানটুলী, থানা- সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ। বিগত ৮ বছর যাবৎ এই আওয়ামী দোসর দ্বারা আমি ও আমার স্বামী নির্যাতিত। আমি ও আমার স্বামী ইতালি প্রবাসী, রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমরা পরিবারবর্গ সহ দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর যাবৎ ইতালীতে বসবাস করিয়া আসিতেছি। আমি বিগত ২০১৭ সালে বাড়ি নির্মাণ কাজের জন্য বাংলাদেশে আসি। তখন নাজিম উদ্দিন বিল্ডিং নির্মাণ/ ঠিকাদারী কাজ নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। নাজিম উদ্দিন বিগত সময়ে আওয়ামীলীগ সরকারের দলীয় নেতা হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত।
তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা চাদপুর-২ আসনের এমপি মায়া চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ফলে এলাকায় তার বেশ প্রভাব ছিল। পরবর্তীতে এক প্রকার বাধ্য হইয়া আমরা নাজিম উদ্দিনকে ঠিকাদারী কাজের দায়িত্ব নেই। কাজ শুরুর দুই মাসের মধ্যে দেখতে পাই, সে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বাড়ি নির্মাণ কাজ করিতেছে। এক পর্যায়ে এই ব্যাপারে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয় এবং মনমালিন্য হয়। পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে, তাকে আর ঠিকাদারী কাজের দায়িত্ব দিব না। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলে সে আমাদের ক্ষতি সাধন করিতে মরিয়া হইয়া উঠে। আমাদের উপর প্রতিশোধ পরায়ণ হইয়া দলিয় প্রভাব খাটাইয়া সে আমাদের নির্মাণাধীন বাড়ির বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়। ডিপ বসানোর কাজে বাধা দেয়। তার দলীয় বাহিনী দিয়ে একাধিকবার হুমকি-ধামকি সহ প্রাণ নাশের ভয় দেখায়।আমার বাড়ির নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করা ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। আমার বিরুদ্ধে নাজিম উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা নং- ৫৯৪/১৭ দায়ের করেন। যা বিজ্ঞ আদালতে মিথ্যা প্রমানিত হয় এবং আদালত মামলাটি খারিজ করিয়া দেয়। তাহার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে আমি তৎসময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিকবার অভিযোগ জানাই এবং সহযোগীতা চাই। কিন্তু তাহার প্রভাবে তখন থানা থেকেও আমাকে কোন ধরণের সহযোগীতা প্রদান করা হয়নি। এত হয়রানির মধ্যে আমি নিরুপায় হয়ে বাড়ির নির্মাণ কাজ রেখে বিদেশ চলে যাই। আমি ইতালি থাকাকালীন নাজিম উদ্দিন তার দলীয় লোক দিয়ে আমার বাড়ির ছাদের ২৭টি পাইলের রড কেটে নিয়ে যায় এবং দলীয় ক্যাডার দিয়ে আমার বাড়ি ভাঙচুর করে।
এমতাবস্থায় আমি বাধ্য হয়ে দেশে আসি। আমি দেশে আসলে ২১/০৪/২০১৯ ইং তারিখে নাজিম উদ্দিন আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় এবং বলে আমার বাড়ি সংলগ্ন পাঁচ ফিট প্রশস্তের রাস্তাটি আমি যেন আট ফিট চওড়া করে দেই। আর যদি না করি, তাহলে নাজিম উদ্দিনকে যেন ১৫,০০,০০০/- (পনের লক্ষ) টাকা প্রদান করি। পরবর্তীতে আমি তাকে তার দাবিকৃত চাঁদা না দিলে সে দলীয় ক্যাডার দিয়ে আমার বাড়ির পিলার ভেঙ্গে ফেলে এবং রাস্তা প্রশস্ত করে। যে রাস্তা শুধু তার বাড়িতেই যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এইভাবে বিবাদী আমার প্রায় ৫০,০০,০০০/- (পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা ক্ষতিসাধন করে। এসব বিষয়েও আমি থানায় গিয়ে এবিষযে একাধিকবার অভিযোগ করলেও থানার কর্মকর্তা অভিযোগ গ্রহণ করে নাই।
তারপর ২০২৩ সালে বাড়ি নির্মাণ কাজ পুণরায় শুরু করলে নাজিম উদ্দিন আবারো হয়রানি শুরু করে। সে আমার বাড়ির আঙ্গিনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সে আগুনের ধোয়ায় আশেপাশের অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে গত বছরের ৫ই আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার চলে গেলে আমরা ভাবি যে, নাজিম উদ্দিন আর আমাদের সাথে ঝামেলা করবে না। আমরা নিশ্চিন্ত মনেই বাড়ির কাজ শুরু করি। কিন্তু তারপরও সে তার অপরাধমূলক কর্মকান্ড আমাদের সাথে চালিয়েই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত নাজিম উদ্দিন বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করে আসছে।
আগস্ট পরবর্তী সময় সে ১৬/০৫/২০১৫ ইং তারিখে আমার স্বামীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমোতে যোগাযোগ করিয়া অনকি প্রানান করে। আমাকে হুমকি দেয় যে, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে বিদেশ যেতে দিবে না এবং গুম করে ফেলবে। আমি খুবই আতঙ্কিত বোধ করছি। এবং আমি আমার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় জীবন যাপন করছি। বাংলাদেশের সকল সাধারন মানুষদেে কাছে আমাদের প্রশ্ন, “আমরা প্রবাসী বলে আমাদের কি কোন মূল্যায়ন নেই? আমরা কি কোন ন্যায় বিচার পাবো না? আমরা কি মানুষ না? আমরা প্রবাসীরা আর কত নির্যাতন এবং অবমূল্যায়িত হবো? আমরা কি দেশের কোন উপকারে আসছি না? “আমরা আমাদের দেশে একটু শান্তিতে থাকতে চাই, দেশের মানুষের কাছে আমরাতো এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না।