দৈনিক তালাশ ডটকমঃ ৩১মে ২০২৫,নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এক অনন্য দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কেবল নয় ফলাফলমুখী শিক্ষা, বিকাশিত হোক মানবতার দীক্ষা”এই অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা। শিরোনাম ছিল “শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা।
এই গুরত্বপূর্ণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার।
গেস্ট অফ অনার হিসেবে সভায় অংশগ্রহণ করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সম্মানিত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান, যিনি শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে প্রাজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন।
সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল রিসার্চ-এর অধ্যাপক ড. মনিনুর রশিদ, যিনি শিক্ষা পদ্ধতিতে মানবিক ও নৈতিক দিকগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
সভায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন নারায়ণগঞ্জের গর্ব, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব সিদ্দিক জোবায়ের, যিনি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সভাটি শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা-এর আন্তরিক ও চিন্তাশীল স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে। তাঁর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন নারায়ণগঞ্জকে একটি মানবিক, আধুনিক ও শিক্ষাবান্ধব জেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় শিক্ষার্থীদের আচরণ, নৈতিকতা ও সামাজিক দক্ষতাকে Noticeable Previous Frame of Attitude (NPFA) হিসেবে নথিবদ্ধ করে রাখার প্রস্তাব করেন; যা তার কর্মজীবন বা ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি রেজিস্ট্রার বই থাকা উচিত, যেখানে শিক্ষার্থীদের আচরণ সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ থাকবে। এটি এখন সময়ের দাবি।
জেলা প্রশাসকের দিকনির্দেশনায় এই মতবিনিময় সভাটি পরিণত হয় একটি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অনন্য প্ল্যাটফর্মে। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পর্যায়ের সম্মানিত সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ জেলার খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধানগণ, অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষার্থীরা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণ্যমান্য সাংবাদিকরা।
সভার মূল অংশে অতিথিবৃন্দ ও অংশগ্রহণকারীরা একমত হন—শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল নয়, একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবিকতা, দেশপ্রেম, এবং দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব গড়ে তোলাই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা, অভিভাবকদের দায়িত্ব, এবং নীতিনির্ধারকদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে গঠনমূলক মতামত ও সুপারিশ গৃহীত হয়।
সভা শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশবান্ধব সচেতনতা গড়তে “গ্রিন এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ” কর্মসূচির আওতায় গাছ উপহার দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে এই অনন্য উদ্যোগ প্রশংসিত হয়।
পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে অতিথিবৃন্দের অংশগ্রহণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। সবশেষে সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে একটি সুদৃশ্য ফোয়ারার উদ্বোধন করেন অতিথিরা—যা জেলার সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার বার্তাও বহন করবে।
৩১ মে ২০২৫ তারিখের এই অনুষ্ঠান শুধু একটি সভা নয়, বরং একটি দিকনির্দেশনা, একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা। শিক্ষা হবে শুধু ডিগ্রির নয়, হবে মানবিকতার বিকাশ, সুনাগরিক তৈরির কারখানা। আর এই দর্শনের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ এগিয়ে যাচ্ছে, জেলা প্রশাসনের দূরদর্শী নেতৃত্বে।
এই ঐতিহাসিক দিনে অংশগ্রহণকারী সব অতিথি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তাগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং বিশেষ করে জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা-র কর্মনিষ্ঠ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।