এভাবেই গোটা পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে অপরাধ জগতের এই সাম্রাজ্য

দৈনিক তালাশ ডটকমঃ ৩০টির বেশি মামলা থাকলেও একের পর এক অপরাধ করে বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে নির্ভার ছিল চুন্নু ও তার গোটা সন্ত্রাসী বাহিনী।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের গত ২০ এপ্রিল রাতে চুন্নুকে কুতুবপুর নয়ামাটি এলাকার তার নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ সময় চুন্নুকে ছাড়িয়ে নিতে তার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশ উপর হামলা চালালে ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়।

তাদেরকে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এর আগে বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন, ৬ রাউন্ড গুলি ও বিদেশী মদ বিয়ারসহ ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১।

ওই সময় পুরাতন কোর্ট এলাকার র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-১ এর এএসপি মাসুদ আনোয়ার জানিয়েছিলেন, চুন্নু একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী।

এই বাহিনী দ্বারা সে ভূমি দখল ও মাদক বিক্রি করাতো।

চুন্নু গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর অস্ত্র  ভাণ্ডারের সন্ধানে নামে র‌্যাব-১১।

এর আগেই র‌্যাব জানতে পেরেছিলো চুন্নু তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে তাঁর অস্ত্র নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে।

এরপরই একই বছরের ১৪ মার্চ র‌্যাব-১১ চুন্নুর শ্যালিকা সুমাইয়া আক্তার মুন্নির চোধুরী বাড়ি এলাকার বাড়িতে অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ৮ রাউন্ড গুলি ও চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করে।

২০১৭ সালের ৩ আগস্ট চুন্নু ও তাঁর বাহিনীর  বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন লামাপাড়া এলাকার  মো. হাবিব মিয়া। এখানে হাবিব মিয়া দাবি করেছিলেন চুন্নু ও তাঁর বাহিনী অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাঁর কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোন লুটে নেয়।

একই বছরের ১০ নভেম্বর ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আতাউর রহমান চুন্নুকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়।

এসময় চুন্নুর বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে তাঁকে আটক করলেও তাঁর সহযোগিরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় চুন্নু পালিয়ে গেলেও তাঁর সহযোগি আরফান মাদবরকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনার ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে চুন্নুর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড রাফেদ আলীকে একই থানার এসআই জিন্নাহর উপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছিলো চুন্নু বাহিনী।

পরে ২৫ অক্টোবর এই রাফেদ আলীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী এলাকার আবু বক্করের নির্মাণাধীন বাড়ির দোতলা থেকে মাদক সেবনরত অবস্থায় চুন্নুকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী মোফাজ্জাল হোসেন চুন্নুকে (৪৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, চুন্নু ও তার দুই ভাই তোফাজ্জল ও রানা বাহিনীর অত্যাচারে এলাকায় কোন সাধারণ লোক অথবা ব্যবসায়ীরা নয়ামাটি এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারেন না।

নয়ামাটি এলাকায় কেউ বাড়ি করলে সেই বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়।

কেউ ব্যবসা করলে প্রতিমাসে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে কাউকে শান্তিতে বসবাস করতে দেয় না তারা।

চুন্নুর কারণে নয়ামাটি, লামাপাড়া এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি করতে সাহস পায়না। তাকে ও তাঁর বাহিনীকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা না দিলে কেউ বাড়ি বা ফ্যাক্টরীতে একটি ইটও লাগাতে পারেনা।

নতুন জমি বেচাকেনাতেও চুন্নু বাহিনীকে মোটা অংকের টাকা দিতে হত।

আশেপাশের এলাকায় জমির দাম বাড়লেও চুন্নু বাহিনীর চাঁদাবাজীর কারণে এই এলাকায় এখনও জমির দাম অনেক কম।

এরকারণ চুন্নু ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী।

আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন ভোল পাল্টে আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে মৃত পুইক্কার সন্ত্রাসী পরিবারটি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুন্নু সাম্রাজ্যে পতনের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন নয়ামাটি-লামাপাড়া এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *