দৈনিক তালাশ.কমঃ ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট থেকে বাংলাদেশের মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। এখনও কোন নির্বাচন হয়নি। সর্বসম্মতি জ্ঞাপন করে নির্বাচন ছাড়াই কিছু ব্যক্তিদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। এই সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থণ রয়েছে। এই সরকারের প্রতি সকলের প্রত্যাশা আছে। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির কাছেও অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। সাধারণ মানুষ ভাবছে, স্বৈরাচারী পালিয়েছে ও বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু না, বিএনপি ক্ষমতা আসে নেই, ক্ষমতায় আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কিছু সংস্কারের মধ্য দিয়ে কাজ করছে। এই সরকারকে বিএনপি ও অন্যান্য দল সমর্থণ দিচ্ছে। ’
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে এক গণসমাবেশে এই কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। সমাবেশের সভাপতিত্বে করেন ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ ও সঞ্চালনায় ছিলেন ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল বারী ভূইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন খন্দকার শিপন, কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাইনুল হোসেন রতন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব কায়সার রিফাত, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলী, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম, জাতীয়দাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম সাদরিলসহ অনেকে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গিয়াসউদ্দিন বলেন,১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলাম। সেই মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল স্বৈরাচারের পতন এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে পাওয়া, আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, দেশে সুশাসন প্রবর্তন করা, ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ছিল আমাদের লক্ষ্য। ৫৩ বছরে কিছু লক্ষ্য বাস্তবায়ন হলেও, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে দেয়নি। সেই সাথে বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন ছিল ধ্বংস করে দিয়েছে। স্থানীয় শাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যক্তিগত বাহিনীতে পরিণত করে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের কাছে উন্নয়নের নাম দিয়ে মেগা প্রজেক্ট দিয়ে হাজার কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দল নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এই আন্দোলন সংগ্রামের সময় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আমাদেরকে জেল জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। গুলি করে পাখির মত এদেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এদেশের ছাত্র জনতা চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। সে সময় পুলিশসহ শৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সবাইকে নিরস্ত্র মানুষের উপর লেলিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় টাকা কেনা গুলি দিয়ে মানুষকে হত্যা করেছে। শিশু মহিলা ও যোগ্য থেকে বাঁচতে পারে নাই।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গিয়েও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ষড়যন্ত্র করছে। কি করে অন্তরর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করা যায় সেটাই তাদের চেষ্টা। বিভিন্নভাবে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে এরই মধ্যে। পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সহ অবস্থান করে। সম্প্রীতির সাথে আমরা বসবাস করছি। সেই দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একটি অন্যতম উদাহরণ। হিন্দু ধর্মীয়দের ব্যবহার করে বাংলাদেশের দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। ইসকন নামে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন দিয়ে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হয়, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকার আবার জাতির উপর সে চেষ্টা চলছে। স্বৈরাচারী সরকার পুলিশ বাহিনীকে নিজের বাহিনী বানিয়েছিল। নিরস্ত্র মানুষদের বিরুদ্ধে তাদের লেলিয়ে দিয়েছিল। আমরা এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৈপ্লবিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছি। অনেক পুলিশ পালিয়ে গিয়েছে। অনেকে জেল খাটছেন, অনেকে চাকরিতে যোগদান করছে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সে উন্নয়ন হচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে সহযোগিতা দেওয়া এখন আমাদের দায়িত্ব। তাদের সহযোগিতা না করলে দুর্বল প্রশাসন দিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ষড়যন্ত্রকারীরা এই সুযোগটা নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার ষোল বছর মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করেছে। অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছে। অনেক মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে মানুষদের কষ্ট দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রাজপথে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসীদের গডফাদার তার লোকজনদের নিয়ে সশস্ত্রভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এগুলোর পরিষ্কার দলিল-দস্তাবেজ আছে, সাক্ষি আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের অন্যতম দাবি, যারা এই অন্যায় অত্যাচার করেছে, মানবতাবিরোধী অন্যায় করেছে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের আরেকটি দাবি হচ্ছে, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৩৫-৪০ বছরের মানুষ যারা আছেন তারা ২০১৪,২০১৮,২০২৪ এ ভোট অধিকার প্রয়োগ করতে পারে নাই। ডামি নির্বাচন হয়েছে, দিনের ভেঅট রাতে হয়েছে, ভোটারবিহীন ভোট হয়েছে। কোন ব্যক্তি ভোট প্রয়োগ করে নিজের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে নাই। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের দাবি, দ্রুত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অবিলম্বে নির্বাচন এর ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের নেতা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে, স্বৈরাচারী সরকার দেশের অর্থনীতি, মানুষের অধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই তিনি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ৫ তারিখের সরকারকে বিদায় করে দিয়ে মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখছে। দেশকে সংস্কার করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখতে হবে, যতটুকু সংস্কার করলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ হবে ততটুকু সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের রোড ম্যাপ দ্রুত দিতে হবে। কোন প্রকার ষড়যন্ত্রে নির্দলীয় অন্তর্বর্ন্তী সরকারকে পা দেয়া যাবে না। যদি পা দেয় দেশ সর্বনাশ হয়ে যাবে।