নওগাঁ সদর ২৫০ বিশিষ্ট হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস হচ্ছে না অর্থের অভাবে অপূর্ণই

দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৭ বছরেও কলেজটি তার স্থায়ী ক্যাম্পাস পায়নি। ক্যাম্পাসের জন্য জমি নির্ধারণ করা হলেও, অর্থের অভাবে জমি অধিগ্রহণ আটকে রয়েছে। বর্তমানে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের ভবনের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। শ্রেণীকক্ষের সংকট, শিক্ষকের অভাব, ল্যাবের সুযোগ-সুবিধা কম এবং আবাসন সংকট রয়েছে। ক্লাসরুমের সংকটে এক বর্ষের পাঠদান চলাকালে অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়, যার ফলে তাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ভালো ডাক্তার হওয়ার বিষয়েও শঙ্কিত। ক্যাম্পাসের অবস্থান ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৮ সালে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ সরকারি অনুমোদন পায়। এরপর থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হয়। ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় কয়েকটি কক্ষ নিয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল। বর্তমানে সেখানে মোট ৬টি শিক্ষাবর্ষের ৩২০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ৪টি ক্লাসরুম রয়েছে। কলেজের ৮৩টি শিক্ষক পদের মধ্যে বর্তমানে ৫০ জন শিক্ষক আছেন, ৩৩টি পদ শূন্য। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের শিক্ষকও নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দেবারথী সিংহ চৌধুরী বলেন, “ক্যাম্পাসের অভাবে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে ক্লাসরুম ও হলরুমের সংকট দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে, ক্যাম্পাস থাকলে আরও ভালো পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারব।”
আরেক শিক্ষার্থী জাকিয়া তাসমিন জেবা বলেন, “আমাদের ল্যাবের সংকট রয়েছে। অনেক সময় স্যাম্পল ঠিকঠাক পাওয়া যায় না। একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী যখন প্র্যাকটিক্যাল রুমে যায়, তখন কিছু শিক্ষার্থী সুযোগ পায়, আবার কিছু শিক্ষার্থী সুযোগ পায় না। এর ফলে প্র্যাকটিক্যালের অভাব থাকে।”
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাওদা খাতুন শান্তা বলেন, “ক্লাসরুমের সংকটে এক বর্ষের পাঠদান চলাকালে অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় বেঞ্চের সংখ্যাও কম থাকে, ফলে অনেকেই বসার জায়গা পায় না। শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হয়।”অন্যদিকে, রাহাদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের নিজস্ব হোস্টেল নেই, ফলে ভাড়া করা হোস্টেলে থাকতে হয়। অনেক দূরে থাকায় নানা সমস্যা হতে থাকে। এছাড়া, খেলাধুলার কোনো জায়গা নেই।” নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, “নওগাঁ মেডিকেল কলেজের জন্য শহরের বাইপাস এলাকায় জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ম্যাপিং ও জমির প্রস্তাব প্রস্তুত রয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখনও বরাদ্দ হয়নি। অর্থ বরাদ্দ হলেই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।” এদিকে, নওগাঁ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, “নওগাঁ একটি বড় জেলা, যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। দ্রুতই মেডিকেল কলেজের জমি অধিগ্রহণ এবং স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু হবে। এছাড়া, অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে এবং শীঘ্রই নওগাঁবাসী নওগাঁ মেডিকেল কলেজের উন্নয়ন দেখতে পাবেন।
নওগাঁ #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *