নওগাঁ প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্কুল ছাত্রী মুখে বিষ ঢেলে দেয়ার অভিযোগ

দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁয় উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় কাল হলো স্কুল ছাত্রী শামীমার

প্রেমের প্রস্তাব অস্বীকার করায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খোজাগাড়ী গ্রামে স্কুল ছাত্রী শামীমা আক্তারকে (১৪) মারধরের পর মুখে বিষ ঢেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত নাজমুল হোসেন (১৯) ও পরিবারের বিরুদ্ধে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত দুই মাস থেকে বাড়িতে। বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে শামীমা। মাথার চুল উঠে গেছে। শরীর দুর্বল ও কিডনি সমস্যাতে ভুগছে। সবমিলে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। গত ২৮ আগস্ট উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় শামীমার চাচা সুমন হোসেন বাদী হয়ে নাজমুলকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের থানায় এজাহার দায়ের করলে ৯ সেপ্টেম্বর মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন। মামলার পর পুলিশ নাজমুলকে আটক করা হলে জামিনে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে আসে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়- শামীমা আক্তার স্থানীয় সন্যাসতলা নাসরিন সিদ্দিকী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা শামিম একজন দিনমজুর। সংসারে সুখ ফেরাতে মা হয়েছেন প্রবাসী। অভাবের সংসারে স্বপ্ন ছিলো পড়াশুনা করে একদিন পরিবারের হাল ধরবেন। মা প্রবাসী হওয়ায় ঘরের কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও করছিলো। নিয়মিত যেত স্কুলে। কিন্তু হঠাৎ তার দিকে নজর পড়ে এক মানুষরূপী শকুনের। তার জীবনে নেমে আসে নিকষ কালো অন্ধকার। মানুষরূপী হায়েনার হিংস্রতায় তার স্বপ্ন এখন অন্ধকারে। চার দেয়ালের মাঝে তার রোগা নিথর দেহ বিছানায় বন্ধি।
স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে একই গ্রামের আব্দুর রশিদ এর বখাটে ছেলে নাজমুল হোসেন প্রেমের প্রস্তাব দেয়া সহ উত্ত্যক্ত করতো। শামীমা বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। তার চাচা সুমন হোসেন গত ২৮ আগস্ট দুপুরে নাজমুল কে ডেকে ভাতিজী কে বিরক্ত করতে নিষেধ করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের আঁধারে নাজমুল, তার বাবা আব্দুর রশীদ ও চাচা আব্দুল জলিল ও শাহীদসহ বেশ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়ির পাশে বাবা শামীম ও চাচা সুমনকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। আর নাজমুলের মা নাজমা এবং চাচী রিভা ও পারুল ঘরে ঢুকে শামীমাকে মারধর করে মুখে আগাছানাশক বিষ ঢেলে দেয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় শামীমাকে উদ্ধার বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশংকাজনক হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। অবস্থার আরো অবনতি হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
শামীমার শামীম হোসেন বলেন, প্রতিনিয়িত মেয়েকে উত্যক্ত করত বখাটে নাজমুল। সেটার প্রতিবাদ করাই মেয়ের কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমার মেয়ে বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। মাথার চুল উঠে গেছে। শরীর দুর্বল ও কিডনি সমস্যাতে ভুগছে। সবমিলে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে মেয়েটা। আমি এক অসহায় দিনমজুর। নানাভাবে এখনও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মামলা তুলে নিতে আর আমরা যেন চুপ থাকি। আমি সঠিক বিচার চাই।
কাঁন্না বিজরিত কণ্ঠে শামীমা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় প্রেমসহ কু- প্রস্তাব দিতো নাজমুল। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভয়ভীতি দেখায়। তার পরিবারকে জানালে প্রথম অবস্থায় কয়েকদিন নিরব ছিলো। বাধ্য হয়ে বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে থানায় বসে নাজমুল হোসেন প্রতিশ্রুতি দেয় আমাকে আর বিরক্ত করবে না। পরে আবারও বিরক্ত করে। তারপর রাতে আঁধারে তারা এসে বাবা, চাচাসহ আমাকে মারধর করে মুখে বিষ দেয়। বর্তমানে আমার অবস্থা খুবই খারাপ। আমি বাঁচতে চাই, তাদের কঠিন বিচার চাই বলেই কাঁন্না শুরু করেন।
নওগাঁ #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *