নওগাঁয় লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে ৩দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী নৌবিহার গ্রামীন মেলায় দর্শনার্থীদের ভীড়

দৈনিক তালাশ.কমঃ উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ: নওগাঁয় ছোট যমুনা নদীর বুকে অর্ধ সহস্র নৌকার যাত্রা আর পাশে মাঠজুড়ে হচ্ছে মেলা। শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এমনই এক দৃশ্যের দেখা মিলেছে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কুজাইল বাজারে। হাজারো দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে স্থানটি পরিণত হয় সম্প্রীতির মহা মিলন মেলায়।স্থানীয় কাশিমপুরের রাজা শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকেই প্রতি বছর লক্ষীপূজা শেষে ওই এলাকায় এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।তিন দিনব্যাপী এ মেলার প্রথম দিন দুপুরে জেলার রাণীনগর, আত্রাই, নওগাঁ সদর, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেবী লক্ষীর ভক্তরা প্রতিমা নিয়ে ছোট যমুনা নদীর কুজাইল পয়েন্টের দিকে আসতে থাকেন। ওই মুহূর্তে সুসজ্জিত নৌকায় নেচে গেয়ে নৌবিহার উদ্‌যাপন করতে থাকেন তারা। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলে নৌ বিহার। আকর্ষণীয় এ নৌ বিহারে অংশ নেওয়া পাঁচ শতাধিক নৌকার বেশিরভাগ নৌকাতেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি দেখা যায় অন্য ধর্মের নানা বয়সী মানুষ। জাত-ধর্মের বিভেদ ভুলে উৎসবে মেতে উঠেছেন সবাই। নদীতীরবর্তী দুই এলাকায় ভিড় জমান হাজারো দর্শনার্থী।এদিকে একই সময়ে কুজাইল বাজার এলাকায় বসে জমজমাট গ্রামীণ মেলা। এ মেলা দেখতে নওগাঁ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। তিন দিনের এ মেলায় বিভিন্ন মিষ্টান্নের দোকান তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। মেলা থেকে মিষ্টি, মিঠাই ও বড় মাছ কিনে শশুড় বাড়িতে নিয়ে যান জামাইরা। বাজার সংলগ্ন গ্রামের বাড়িগুলো মুখরিত হয়ে উঠে আত্মীয় স্বজনদের আগমনে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি ছোট যমুনা নদীতে হয় নৌ বিহার। পরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক ও শাফিন বলেন, প্রতি বিসর্জনের দিন মেলায় বড় বড় মাছ ওঠে। বিভিন্ন পদের মিষ্টান্নের দোকানে ছেয়ে যায় চারিপাশ। আশেপাশের গ্রামগুলোর জামাইরা এখানে এসে মাছ, মিষ্টিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যায়। এছাড়াও সকলে একসঙ্গে নেচে ঈদের মতো করেই নৌবিহার উদ্‌যাপন করা হয়। তিন দিনের এ মেলা চলাকালীন সময়ে আশেপাশের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের ভিড় ক্রমাগত বাড়তে থাকে। কুজাইল বাজার সংলগ্ন শেখপাড়া গ্রামের জামাই অন্তর হোসেন বলেন, পাশেই শ্বশুর বাড়ি হওয়ায় প্রতি বছরই এখানে আসার সৌভাগ্য হয়। মেলায় এসে শ্যালক, শালিকাসহ শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনলাম। বড় মাছ ও মিষ্টি কিনেছি। এই দিনে জামাইদের মাঝে বেশি বেশি কেনাকাটার প্রতিযোগিতা হয়। যে জিতবে তার খাতির তত বেশি।নওগাঁ শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লা থেকে নৌবিহারে অংশ নেওয়া অর্পিতা মহন্ত রাত্রী বলেন, প্রতি বছর লক্ষ্মী পূজা শেষে কুজাইলের এই নৌ বিহারে অংশ নিতে আসি। দূর্গাপূজার মতোই বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়। এবারের নৌবিহারে গত বারের চেয়ে বেশি সংখ্যক নৌকা অংশ নিয়েছে। গ্রামীণ মেলা থেকে কিছু কসমেটিকস ও বাচ্চাদের জন্য খেলনা কিনেছি। সব মিলিয়ে অনেক ভালো কেটেছে এবারের লক্ষ্মী পূজা।মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রামীণ মেলায় আসা দর্শনার্থী আক্তারুজ্জামান, হাবিব ও শাওন বলেন, গত বছর সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাঁকজমকপূর্ণ এ মেলার সম্পর্কে জেনেছিলাম। তাই এবার দূর্গাপূজার পর থেকেই মেলায় আসার জন্য খোঁজখবর রেখেছি। অবশেষে বন্ধুরা সবাই মিলে এসে দারুণ উপভোগ করলাম। এখানেলো ছোট- বড় সবার জন্য ভিন্ন ধরনের রাইড আছে। অনেক আকর্ষণীয় ফাস্টফুড থেকে শুরু করে মিষ্টান্নের স্বাদ নিয়েছি। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি গ্রামের মেলায় ফার্নিচার বিক্রি দেখে।

নওগাঁ #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *