দৈনিক তালাশ.কমঃ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ডের উত্তর পাশে ডগাড় রোডের মাথায় সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে কোটি টাকা বাণিজ্যের মিশনে নেমেছেন দখলদার প্রতারক চাঁদাবাজ সিএনজি ড্রাইভার মতিউর রহমান সুমন।
আওয়ামী সরকারের সময় শামীম ওসমানের ক্ষমতার প্রভাবখাটিয়ে সরকারী জায়গা দখল করে নেয় চাঁদাবাজ সুমন। বর্তমানে কোমল মতি ছাত্রদের নাম ভাংগিয়ে দোকান পাট ও পরিবহন টিকিট কাউন্টার বসানোর জন্য রাতের অধাঁরে সরকারি জায়গায় নির্মাণ করেছেন টিনের ঘর। সওজ কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও দখলদার চাঁদাবাজ সুমন তা মানছেন না।
অভিযোগ উঠেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সাইনবোর্ড মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পশ্চিম পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনস্থ সরকারি জায়গায়টি দখল করেছেন শামীম ওসমানের ক্যাডার চাঁদাবাজ মতিউর রহমান সুমন।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তদের যোগসাজশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ডের উত্তর পাশে ডগার রোডের মাথায় গত বুধবার রাতে নির্মাণ করেছে প্রায় ১০ ফুট প্রশস্থ ও ৮ ফুট লম্বা করে প্রায় ১২টি টিনের ঘর। এখানে বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাসের টিকিট কাউন্টার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলোর পূর্ব পাশে রয়েছে সাইনবোর্ড হাইওয়ে পুলিশ বক্স। সাইনবোর্ড হাইওয়ে পুলিশ বক্সের পশ্চিম পাশে মহাসড়ক ঘেঁসে বানানো হয়েছে ঘরগুলো।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক একাধিক পরিবহনের কাউন্টার মালিক জানান, তারা সাইনবোর্ডে ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে পূর্ব দিকে সরকারি জায়গায় দীর্ঘ দিন ধরে টিকিট কাউন্টার চালিয়ে আসছেন। সাইনবোর্ডে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকান ও কাউন্টার রয়েছে। মহাসড়ক প্রশস্থ করায় অনেকবার ভাংগা পড়েছে ঘর গুলো।
এখন দোকান বসানোর জন্য সাইনবোর্ড হাইওয়ে পুলিশ বক্সের পশ্চিমে মো. জয়নাল আবেদীনের জায়গার ও গরুর খামারের দক্ষিণ পাশে ছাত্রদের নামে সরকারী জায়গা অবৈধভাবে দখল করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ঘর নির্মানের অনুমতি দিয়েছে প্রতারক চাঁদাবাজ মতিউর রহমান সুমন।
প্রতিটি ঘরের জায়গার জন্য অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা ও দৈনিক ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে মতিউর রহমান সুমনকে।
জায়গাটি মহাসড়কের পাশে থাকায় অধিক সুবিধাজনক হওয়ায় অধিকাংশ কাউন্টার মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উচ্চ মূল্য দিয়েই নিতে রাজি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সওজ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অর্থের স্বার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ডের উত্তর পাশে মো. জয়নাল আবেদীন এর জায়গায় গরুর খামারের দক্ষিণ পাশে প্রায় দেড় একর সরকারি জমি রয়েছে। সরকারি জমিটি দখলদার চাঁদাবাজ মতিউর রহমান সুমন আ.লীগ সরকারের সাবেক প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের নাম ব্যবহার করে দখলে রাখে।
ইতো পূর্বে সাইনবোর্ডের উক্ত জমিটি ছিল জলাশয়। তখনও চাঁদাবাজরা জলাশয়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের পাড়ে নির্মাণ করে ছিল বিভিন্ন দোকানপাট ও কাউন্টার। জমিটির দক্ষিণ পাশে রয়েছে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। আর এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পথচারীরা চলাচল করে।
তৎকালিন সাইনবোর্ড ট্রাফিক পুলিশ বক্স ইনচার্জ এর উদ্যোগে ২০২২ সালে জলাশয় ভরাট করে গাড়ির ডাম্পিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক নানান জটিলতার কারণে জায়গাটিতে আর ডাম্পিং করা হয়নি।
সুযোগ বুঝে উক্ত জায়গায় নারায়ণগঞ্জ সওজের কর্মকর্তাদের অর্থের স্বার্থে ম্যানেজ করে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ক্যাডার চাঁদাবাজ সিএনজি ড্রাইভার মতিউর রহমান সুমন জায়গাটি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে নিয়ন্ত্রন করছেন। আর এসব চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের এহেন কার্যকলাপে এলাকাবাসী এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সরকারি জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে ড্রাইভার চাঁদাবাজ মতিউর রহমান সুমন বলেন, নার্সারী করার জন্য সওজে আবেদন করেছি। তাছাড়া দূর-দূরান্ত এলাকার যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে যাত্রীবাহী বাসের কাউন্টার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার জন্য ঘরগুলো নির্মাণ করতে বলেছি। সওজ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেননি বলেও জানান তিনি।
চাঁদাবাজ সুমন আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া এক উপদেষ্টাসহ আর্মির অফিসারদের সাথেও চাঁদাবাজ সুমনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে দাম্ভিকতার সাথে জানান তিনি।
এমনকি বড় বড় সাংবাদিকদেরকেও নাকি তিনি রাখেন তার পকেটে। সাংবাদিকদের সাথে তার এমন সম্পর্ক থাকার কথা জানান তিনি।
সুমন বলেন, যাদের কথা বলেছি তাদেরকে যখনই ফোন করি তারা আমার সাথে কথা বলে এবং সব রকম সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমার সাথে কেহ বাড়াবাড়ি করলে সুবিধা করতে পারবেনা।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, সরকারি জায়গা দখল ও ঘর নির্মাণ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দখলকারী চাঁদাবাজ সুমন আমাদের বাধা মানছেনা। তবে এবিষয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমনতাবস্থায় এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন।