দৈনিক তালাশ.কমঃ এম এস হান্নান স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার: টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প রেজিস্টারভূক্ত সদস্য কহিনূর আক্তার নামের এক মহিলাকে ঘরে জিম্মি রেখে সাড়ে ১২ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন অভিযোগ শহরের পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড দক্ষিণ কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার আতঙ্ক, ইয়াবা সম্রাজ্ঞী রোজিনা আক্তার, মোঃ ইলিয়াস (সাবেক রোহিঙ্গা), দিদার আলম সহ কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কুতুবদিয়া পাড়ার স্থানীয় অসংখ্য মানুষ। এব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার ইয়াবা সম্রাজ্ঞী রোজিনা ও তার স্বামী রোহিঙ্গা ইলিয়াসের নেতৃত্বে রয়েছে একটি শক্তিশালী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এমন কি নিজস্ব সমাজ কমিটি/ মসজিদ কমিটির / মাদ্রাসা কমিটির /
সব কমিটি তে নেতৃত্ত শুধুমাত্র রোজিনার। রোজিনার বাড়িতে প্রতিদিন নিত্যনতুন (আগন্তুক) মানুষের আনাগোনার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। প্রায় সময় রোজিনার বাড়িতে মানুষের হট্টগোল শুনতে পান এলাকাবাসী। স্থানীয় বাজার ও তার বাড়ির আশপাশে থাকে সশস্ত্র পাহারাদার। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ সবাই। স্থানীয় প্রভাবশালী লোক ও প্রশাসনের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে হয়রানি হওয়ার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না রোজিনার বিরুদ্ধে।।
একটি সূত্র জানান, ইয়াবা সম্রাজ্ঞী রোজিনা ও কহিনূর দুইজনেই একই পথের সারথি। সে সুবাদে দুই জনের মধ্যে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের ব্যবসা জমজমাট ছিল। যুগপৎ মোটা চালানের ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ের
লেনদেন হলেও তাদের মধ্যে কোন সময় বিশ্বাসভঙ্গ হয়নি। একদা স্বামী ইলিয়াসের কু-মন্ত্রনায় বেঁকিয়ে বসেন রোজিনা। ইয়াবা হোলসেলার কোহিনুরের নিকট মোটা চালানের ইয়াবা ক্রয়ের আগ্রহ দেখাবেন। কোহিনূর
মাল (ইয়াবা ট্যাবলেট) নিয়ে আসলে তা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে জিম্মি রেখে পাট মোটা অংকের টাকা আদায়ের ফন্দি আঁটেন তারা স্বামী-স্ত্রী সহ আরো কয়েকজন। কহিনূর মাল নিয়ে আসার কথা জানালে ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে (পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী) ওঁতপেতে থাকেন রোজিনার স্বামী ইলিয়াসের নেতৃত্বে দিদারুল আলমসহ কয়েকজন। স্থানীয়দের তথ্যমতে, মাদক কারবারি রোজিনা, তারই স্বামী দক্ষিণ কুতুবদিয়া পাড়া (বন্দর পাড়া) এলাকার ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস ও সভাপতি দিদারুল আলমের নেতৃত্বে মাদক কারবার সহ প্রতিদিন নানান অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন। মুলত এ এলাকাতে।
বসবাস রত অধিকাংশ লোক বহিরাগত। তারই বেশির ভাগ লোক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রেজিস্টারভূক্ত নাগরিক। রোজিনা ও ইলিয়াসের ছত্রছায়ায় কুতুবদিয়া পাড়াতে বসবাস করেন। এমনকি তাদের প্রত্যেককে মোটা অংকের বিনিময়ে বাংলাদেশী এনআইডি কার্ড করে দিয়েছে ওই দম্পতি। ওখানে এইসব রোহিঙ্গারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বসতি গড়ে তোলে এই সমাজ কমিটি। এই কমিটির আদলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে রোজিনা। রোজিনার পার্শ্ববর্তী বাড়ির শ্রমিক নেতা সালাহ উদ্দীন বলেন, রোজিনা, ইলিয়াস, দিদারসহ অন্যান্য কয়েক ব্যক্তির যোগসাজশে মাদক কারবারি কহিনূর থেকে কৌশলে ইয়াবা ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও এই ঘটনা তাদের অগোচরেই ছিল। অবশ্য কেউ জানলেও জড়িত চক্রটি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর শেল্টারে প্রকাশ্যে এসব অপকর্ম করে বেড়ায়। যে কারণে এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ এবং ঘটনা প্রকাশ করার সাহস করেনি। জানা গেছে- টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের রেজিস্ট্রারভূক্ত রোহিঙ্গা নারী কহিনূর, বর্তমানে শহরের পৌরসভার টেকপাড়াতে ভাড়া বাসায় বসবাসকারি রোহিঙ্গা আবদুল কাদেরের স্ত্রী ইয়াবা সম্রাজ্ঞী কহিনূর আক্তার (রোহিঙ্গা) ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত দীর্ঘদিন। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ায় বসবাসকারি রোহিঙ্গা ইলিয়াসের স্ত্রী ইয়াবা সম্রাজ্ঞী রোজিনা আক্তারের সাথে দীর্ঘদিন বিশ্বস্ততার সঙ্গে ব্যবসা করছে। সুবাদে রোজিনা ও কহিনুরের মধ্যে ছিল দারুন মিল, সখ্যতা, ঘনিষ্ঠতা। এমতাবস্থায় তারা দু’জন বিশ্বস্ততার সাথে একে অপরের কাষ্টমার হিসেবে মাদক কারবারে জড়িয়ে আছে। একদা রোজিনা বেঁকিয়ে বসেন। সে সহ স্বামী ইলিয়াস ও সমাজ কমিটির সভাপতি দিদারুল আলমসহ অন্যান্য কয়েকজনের সঙ্গে ফন্দি আঁটেন। ঘটনার পূর্বে কহিনুর থেকে ২০ হাজার পিস মাল (ইয়াবা ট্যাবলেট) ক্রয় করে নগদ টাকা বুঝিয়ে দেয় ইয়াবা সম্রাজ্ঞী রোজিনা। এর সপ্তাহ দুয়েকের পর পুনঃবার ৫০ হাজার ট্যাবলেট ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়ে কহিনূরকে মালের অর্ডার করেন রোজিনা। মাল দ্রুত আনার জন্য কহিনূরের মুঠোফোনে নিয়মিত যোগাযোগও করা হয়। মাল সংগ্রহ করতে কিছু দিন সময় নিতে হয়েছে কহিনূরকে। সর্বোপরি মাল আনতে কালক্ষেপণ করার কারণে বড়পার্টি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়ে যেভাবে হোক মাল নিয়ে আসতে তাগাদা দেন রোজিনা। ঘটনার দিন, হাতের নাগালে মাল আছে সাড়েবার হাজার মাত্র, বাকিগুলো সংগ্রহ করতেছি। তা ২/১ দিনের মধ্যেই পাবে বলে জানিয়ে রোজিনাকে ফোনে আশ্বস্ত করেন কহিনূর। কহিনুরের ফোন পেয়ে আপাতত সংগ্রহে থাকা মাল নিয়ে দ্রুতই তার বাড়িতে আসতে বলেন রোজিনা। স্থানীয় বাসিন্দা ও ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বরাতে জানা গেছে, কহিনুরের সঙ্গে ছৈয়দ আলম নামক এক যুবককে নিয়ে রোজিনার বাড়িতে ঢুকা মাত্রই ডিবি ছদ্মবেশে (পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী) ওঁতপেতে থাকা রোজিনার স্বামী ইলিয়াস ও দিদার সহ আরো কয়েকজন তাদের দেহ তল্লাশি করে ইয়াবা ট্যাবলেট ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি রুমে আটকে রাখেন। আর বিভিন্ন অঙ্গেলে তাদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখেন। ঘটনার দিন রাতের আঁধারে রোজিনার ঘর থেকে সরিয়ে নিয়ে জসিম উদ্দিন প্রকাশ আচার জসিমের বাড়ির একটি রুমে আটকিয়ে রাখেন। তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে ২০ লাখ টাকার পণদাবি করেন। ঘন্টা পরপর তাদের সাথে কথা বলেন রোজিনা, ইলিয়াস, দিদার ও আচার জসিম। চাহিদামতো টাকা না দিলে সাংবাদিক ডেকে নিউজ করবে আর পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ভয়-ভীতি অব্যাহত রাখেন। সে আরো জানায়, কহিনূর ও ছৈয়দ আলমকে ৩দিন পর্যন্ত জিম্মি রাখেন তারা। পরে কহিনুর টাকা দেয়ার সম্মতি জ্ঞাপন করলেও তার কাছে নগদ কোন টাকা ছিল না। তাই কহিনূরের ভাই হাকিম আলীকে এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। রোজিনা ও ইলিয়াসের কবল থেকে মুক্ত হতে ব্যাংকের একটি খালি চেক ও নগদ ৫ লাখ টাকা হাতে নিয়ে আসতে বলেন। হাকিম আলী চেক ও টাকা নিয়ে আচার জসিমের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ইলিয়াস, দিদার, জসিমের উপস্থিতিতে রোজিনার হাতে তুলে দেন। এরপর নতুন নাটক শুরু করে রোজিনা গ্যাং। ইতিপূর্বে সাড়ে বার হাজার ইয়াবা, ব্যাংকের খালি চেক (ডাচবাংলা ব্যাংক), নগদ পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরও তাদের ছেড়ে দিতে গড়িমসি করে রোজিনা, ইলিয়াস, দিদার, জসিম। কেননা জিম্মিকারিদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যেন কোন আইনগত পদক্ষেপ ও ঘটনা সম্পর্কে তথ্য ফাঁস না করেন ধৃতদের উপর চাপসৃষ্টি করতে বা ভয়েই রাখতে ৩শত টাকা মুল্যের (১শত টাকা ৩টি) খালি স্টাম্প (স্বাক্ষরসহ) নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সমপরিমাণ ভাগের অংশ না পেয়ে ঘটনা সম্পর্কে এবার মুখ খুলেন কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী ছদ্ধ নাম নুরুল আমিন। তিনি এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাছাড়াও ইয়াবা সম্রাজ্ঞী রোজিনা ও ইলিয়াসের নেতৃত্বে নানান অপরাধের ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদককে অবহিত করেন স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে ঘটনাস্থল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে সরেজমিনে কথা বলেন প্রতিবেদক। (ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে)। এ ব্যাপারে কোহিনুরের সাথে ইয়াবা বিক্রি করতে রোজিনার বাড়িতে গিয়ে রোজিনা, ইলিয়াস, দিদার, আচার জসিম কর্তৃক জিম্মির কবলে পড়া যুবক সৈয়দ আলম ঘটনা অকপটে স্বীকার করে বলেন, কোহিনুরের ভাই হাকিম আলীর রিকোয়েস্টে তার বোনের সাথে গেলে ১২ হাজার ৫০০ পিচ ইয়াবা, সঙ্গে থাকা মোবাইল কেড়ে নিয়ে রুমে আটক করে রাখেন। রাত হলে জসিমের বাড়িতে নিয়ে ৩ দিন জিম্মি রাখে তাদের। পরে কহিনূরের ভাই হাকিম আলী নগদ ৫ লাখ টাকা, ব্যাংকের খালি চেক এনে দেয়। তারপরও তাদের ছেড়ে দিচ্ছিল না তারা। আবার খালি স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়। কহিনূরের ভাইয়ের রিকোয়েস্টে ওখানে গেছে মাত্র। সে কোন খারাপ কাজে জড়িত নেই বলে জানান। ইয়াবা ক্রয়ের কথা বলে জিম্মি করে ৩ দিন আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা ও ইয়াবা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করলে রোজিনা আক্তার অস্বীকার করে বলেন, কহিনূর নামের কাউকে চিনি না। আমি ব্যবসা বাণিজ্য করে চলি। এলাকায় কিছু মানুষ আমার প্রতিপক্ষ আছে, তারা আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা রটাচ্ছে। আমি এলাকার বিচার শালিশ করি, অসহায় মানুষের পাশে থাকি। কোন খারাপ কাজে জড়িত নাই। ইয়াবা ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকাতে প্রকাশিত নিউজ ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল, হওয়া ভয়েস রেকর্ডিং সম্পর্কে জানতে চাইলে এসব বিষয়ে কোন সদুত্তর দেননি রোজিনা।