দৈনিক তালাশ.কমঃ সৈয়দ মহসীন হাবীব সবুজ, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইলে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল মাদকমুক্ত আখড়া, যা কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ নামে পরিচিত। টাঙ্গাইল নয়, ঢাকা নয়- কালিহাতী উপজেলায় বাগুটিয়াতে নাম তার কেন্দ্রীয় সাধু সংঘ। প্রায় একশত শতাংশ নিজস্ব জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ – সাধু গুরু, বাউল, ফকির, পীর-দরবেশ এবং গোসাইসহ অসংখ্য ভক্তদের একত্রিত করেছে।
২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার খিলদা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় সাধু গুরু, বাউল, ফকির, পীর এবং গোসাইদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের যাত্রা শুরু হয়। শুরু থেকেই এই সংগঠনটি লালন সাঁইজির ভাবধারা মেনে আসছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাগুটিয়াস্থ কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের প্রতিষ্ঠাতা একজন লেখক এবং সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলম। তিনি জানান, সংগঠনটি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ভাগে বিভাজন করা হয়েছে। যেমন কেন্দ্রীয় সাধু সংঘ সাংস্কৃতিক জোট, কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ পাঠাগার, সাধুসংঘ টিভি এবং কেন্দ্রীয় সাধু পরিষদ। ভবিষ্যতে ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী সাধুদের একত্রিত করে মহা সাধু সম্মেলন ও লালন মেলার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও, রাবেয়া রহমত উল্লাহ বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করে তা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হলো লালন সাঁইজির ভাবধারা প্রচার ও প্রসার করা, আমরা চাই সাধুসংঘের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক।”
কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের সভাপতি বাবু হরি মোহন পাল জানান, “আমরা সারা দেশ থেকে সাধু, গুরু, বৈষ্ণব, বাউল, ফকির, পীর, মাশায়েক এবং গোসাইসহ লালন সাঁইজির ভক্তদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী সাধু সম্মেলন ও লালন মেলা আয়োজন করি।”
রাবেয়া রহমত উল্লাহ বৃদ্ধাশ্রমের সিনিয়র সহ সভাপতি বিশিষ্ট্য শিল্পপতি শফিকুর রহমান মোল্লা বিন মতি বলেন, আমরা মানবতার কাজ করি এবং মানবিক মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। পরিবার কর্তৃক নির্যাতিত মা-বাবাদের উদ্ধার করে আমাদের আশ্রমে থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ সকল দায়িত্ব পালন করি। গরীব অসহায় মানুষ গুলোকে বিনা টাকায় ভর্তি করি এবং লালন পালন করি।
সিনিয়র সাধু আলতাব শাহ ফকির ও সাধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় আধ্যাত্মিক আলোচনার আয়োজন করি, সাধুগণ উক্ত আধ্যাত্মিক আলোচনার
অংশ নেন।”
সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সিঙ্গার খোকন ও সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আল কামাল রতন জানান, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো লালন সাঁইজির গান গাওয়া ও শেখানো। আমরা বিশ্বাস করি, এই গান মানুষের মধ্যে শান্তি ও মানবিকতা ছড়িয়ে দেয়।”
কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ প্রতি তিন বছর পরপর সারা দেশে একাধিকবার লালন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা আয়োজন করে এবং জাতীয় ফলসেবা দিবস পালন করে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের মাঝে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ করে থাকে।
স্থানীয়রা মনে করেন, ধূমপানমুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে সরকারি সহযোগিতা পেলে সংগঠনটি আরও ভালো করবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন বলেন, “এখানকার পরিবেশ খুবই সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ। সরকারের সহযোগিতা পেলে এটি মানব কল্যান বা সেবায় আরও ভালো করবে।”