দৈনিক তালাশ.কমঃ উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ: নওগাঁ মান্দা উপজেলার ৩ নম্বর পরানপুর ইউনিয়নের, চককেসব গ্রামে ১০ বছর ধরে রাস্তার পাশে বৃদ্ধ মা, ‘খোঁজ রাখেন না’ ছেলে। রাতের বেলা হামার ব্যাটা হামাকি বাড়িত থ্যাকে (থেকে) বার করে দিছে, কছে (বলেছে) এই বাড়িত যান না ফিরি। হামি আমার ব্যাটা আর ব্যাটার বউয়ের কাছে বোঝা। প্রায় ১০ বছরের বেশি হলো হামি (আমি) রাস্তাত থাকি, কেউ খোঁজ ল্যায় (নেয়) না।’
এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ মা মিরজান ওরফে মীরো। তিনি জানান, ছেলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে অনেকে আগেই। ১০ বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৩ নম্বর পরানপুর ইউনিয়নের, চককেসব গ্রামে রাস্তার পাশের ঝুপড়ি ঘরে ঝাড়ু বানিয়ে ও গ্রামের মানুষদের ঝাড়ু বেঁধে দিয়ে যা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে চলছে সংসার। কোনো দিন বিক্রি না হলে না খেয়েও পার করতে হয় তাকে।
আপন বলতে দুনিয়াতে এখন আর কেউ নেই, স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর বয়স্ক ভাতার টাকা জমিয়ে কিছু টিন কিনে রাস্তার পাশে কোনোভাবে বাড়ি বানিয়ে থাকছেন মীরো মিরজান বলেন, ‘যে ছেলেকে এত কষ্ট করে লালনপালন করলাম, নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়ালাম। জীবনের চরম কষ্টে আমার ছেলেকে ভালো রাখলাম, কিন্তু আজ সে বড় হয়ে সব ভুলে গেছে। আমার কষ্ট রাখার মতো কোনো জায়গা নেই।’
‘রাতের বেলা হামার ব্যাটা হামাকি বাড়িত থ্যাকে (থেকে) বার করে দিছে, কছে (বলেছে) এই বাড়িত যান না ফিরি। হামি আমার ব্যাটা আর ব্যাটার বউয়ের কাছে বোঝা। প্রায় ১০ বছরের বেশি হলো হামি (আমি) রাস্তাত থাকি, কেউ খোঁজ ল্যায় (নেয়) না।’ এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ মা মিরজান ওরফে মীরো।
তিনি জানান, ছেলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে অনেকে আগেই। ১০ বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৩ নম্বর পরানপুর ইউনিয়নের, চককেসব গ্রামে রাস্তার পাশের ঝুপড়ি ঘরে ঝাড়ু বানিয়ে ও গ্রামের মানুষদের ঝাড়ু বেঁধে দিয়ে যা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে চলছে সংসার। কোনো দিন বিক্রি না হলে না খেয়েও পার করতে হয় তাকে।
আপন বলতে দুনিয়াতে এখন আর কেউ নেই, স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর বয়স্ক ভাতার টাকা জমিয়ে কিছু টিন কিনে রাস্তার পাশে কোনোভাবে বাড়ি বানিয়ে থাকছেন মীরো। তিনি বলেন, “ছেলে আর বউ আমাকে ভাত দিত না। নানাভাবে অত্যাচার করত, কিন্তু আমার ছেলে কোনো প্রতিবাদ করেনি। হঠাৎ একদিন রাতে ছেলে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলে, ‘তোমার যেখানে খু্শি সেখানে চলে যাও, আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না।’ তাই আমি বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে এখানে এসে ১০ বছর ধরে আছি।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অনেক বয়স হয়েছে, এই বয়সে বাহিরে বের হতেও পারি না, তবুও পেটের দায়ে বের হই ঝাড়ু নিয়ে পাড়ায় মহল্লায়। দিনশেষে ২০ থেকে ৫০ টাকা আয় হয় সেটা দিয়েই চালের খুদ কিনে এনে খাই। যেদিন বের হতে পারি না সেদিন না খেয়ে থাকি কিন্তু কেউ খোঁজ খবর নেয় না।’
মিরজান বলেন, ‘যে ছেলেকে এত কষ্ট করে লালনপালন করলাম, নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়ালাম। ভেজা জায়গায় আমি শুয়ে তাকে শুকনো জায়গায় রাখলাম। জীবনের চরম কষ্টে আমার ছেলেকে ভালো রাখলাম, কিন্তু আজ সে বড় হয়ে সব ভুলে গেছে। আমার কষ্ট রাখার মতো কোনো জায়গা নেই, একমাত্র চোখের পানিই আমার সম্বল। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মা, দয়া করে যদি থাকার মতো জায়গা করে দিত আমার মা তাহলে বাকি জীবনটা সেখানে থাকতে পারতাম।’ ছেলের নাম পরিচয় বলতে চাননি মিরজান। গোপন রাখার অনুরোধ জানান। সুখে থাকুক তার একমাত্র ছেলে, এটাই কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস হোসাইন বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই এই বৃদ্ধা মাকে এখানে থাকতে দেখি। মূলত আমরাই এখানে থাকার জায়গা দিয়েছি। তার জীবনে এতই কষ্ট যে আমাদের চোখে পানি চলে আসে।’ পথচারী কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি রাস্তার ওপর দিয়ে যাতায়াতের সময় এই ছোট্ট বাড়িটি চোখে দেখি। খুব খারাপ লাগে যে এই বয়সে তিনি এত পরিমাণ কষ্ট সহ্য করে চলাফেরা করেন। বয়স বেশি হওয়ার কারণে ঠিকমতো হাঁটা চলা করতেও পারে না। বৃদ্ধা মায়ের দ্রুত ব্যবস্থা হওয়াটা জরুরি।’
স্থানীয় বাসিন্দা মজিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সামনেই এক ছোট্ট ঘর, মাঝে-মধ্যে তাকে খাওয়াই, তবুও কষ্ট লাগে যে তার ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ প্রথম আপনার কাছে থেকে অবগত হলাম। খোঁজ নিয়ে তাকে কীভাবে সহায়তা করা যায় সেই উদ্যোগ নেয়া হবে।’
নওগাঁ।