নওগাঁর পৌর বাজারসহ বিভিন্ন গরুর মাংসের দোকানে বেঁধে দেওয়া চেয়ে বেশি মুল্য বিক্রি করছে

দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকারঃ নওগাঁর পৌর বাজারের গরুর মাংসের দোকান। মাংস বিক্রির একটা যৌক্তিক দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক নওগাঁ পৌর মাংস বাজারে দোকানে ঝুঁলানো তালিকায় লেখা রয়েছে ৬৬৫ টাকা কেজি। তবে এই দামে মাংস পাওয়া গেলেও কেজিতে চর্বি মিলছে প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম। আর চর্বি ছাড়া মাংস নিতে গেলে মূল্য তালিকা ছাড়া ক্রেতাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে, নেওয়া হচ্ছে ৭৫০ টাকা। এভাবেই মাংস ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ক্রেতার তর্ক বাড়ছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেজিতে তাদের ১০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

শহরের গোস্তাহাটির মোড়ে পৌর মাংসের বাজার। মাংস ব্যবসায়ীদের এমন কারসাজির অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় কয়েকজন সংবাদকর্মী মাংস বাজারে যান। ৬৬৫ টাকায় চর্বিযুক্ত এবং ৭৫০ টাকায় চর্বি ছাড়া মাংসের বিষয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দরকষাকষি চলছিল। ব্যবসায়ীদের কাছে সংবাদকর্মীরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে মুহূর্তের মধ্যে ক্রেতাকে ৬৬৫ টাকায় চর্বি ছাড়া মাংস দেন। আবার কাউকে ৬৮০ টাকাতেও চর্বি ছাড়া মাংস দেওয়া হয়েছে। মাংস ব্যবসায়ীদের এমন কাণ্ডে ক্ষুদ্ধ ভোক্তারা। বিষয়টি প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দাবি জানিয়েছেন ভোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান- পৌর বাজারে বর্তমানে ১০ জন ব্যবসায়ী প্রতিদিন ১০টি করে গরু জবাই করছে। প্রতিজন ব্যবসায়ীর প্রতিদিনই ৩-৪ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। কিন্তু তারপরও ব্যবসা চালু রাখতে হচ্ছে। ব্যবসা বন্ধ রাখলে পরবর্তীতে ওই ক্রেতারা আর দোকানে আসবেন না। তাই বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েই ব্যবসা চালু রাখতে হচ্ছে। শহরের চকদেবপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ডা. আহমেদ হোসেন খান বলেন, প্রথমে মাংস কিনতে এলে দোকানি বলেন এক কেজি কিনলে ২৫০ গ্রাম চর্বি দিবে। চর্বি ছাড়া ভালো মাংস নিতে হলে ৭৫০ টাকা লাগবে। এসময় সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকায় ৬৬৫ টাকায় ভালো মাংস দিয়েছে এক ব্যবসায়ী। কিন্তু এটা তো নিয়ম না। বিষয়টি প্রশাসনের তদারকি করার দরকার। লস্করপুর গ্রামের মাংস ক্রেতা এক গৃহবধূ বলেন, বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে মাংস কিনার জন্য এসেছি। শুরুতে ভালো মাংস দিবে বলে ব্যবসায়ী ৭৫০ টাকা কেজি চাই। পরে সাংবাদিকরা আসার পর ৬৮০ টাকা কেজি হিসেবে ৮ কেজি মাংস কিনেছি। কিন্তু তারপরও চর্বি ও হাড়ের পরিমাণ বেশি দিয়েছে। মাংস ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন- গত সোমবার ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় ষাঁড় গরু কিনে মাংস বিক্রি করা হয়। যেখানে ৩ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। অনেক ক্রেতা চর্বি নিতে চাচ্ছেন না, তারা ভালো মাংস নিতে চান। যারা ভালো মাংস নিতে চান, তাদের জন্য ৭৫০ টাকা। আর যারা চর্বিসহ নিতে চান তাদের জন্য ৬৬৫ টাকা। প্রতি কেজিতে প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম চর্বি থাকবে। চর্বিতো আর আলাদা করে বিক্রি করা সম্ভব না। এজন্য মাংসের সঙ্গে চর্বি বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। আমরা যেভাবে মাংস বিক্রি করছি এতে করে কেজিতে ১০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নওগাঁ ফারুক মিট স্টোরের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ হোসেন বলেন- গত সোমবার ৬১ হাজার টাকায় গরু কিনে মাংস বিক্রি করা হয়েছে ৫৮ হাজার টাকায়। যেখানে লোকসান হয়েছে ৩ হাজার টাকা। চোখের আইডিয়া করে হাট থেকে গরু কেনা হয়। ঢাকার ব্যবসায়ীরা গরুর কেনায় হাটে গরুর দাম বেশি। ৮০০ টাকা কেজি ওজন হিসেবে গরু কিনতে হচ্ছে। সেখানে আমরা বিক্রি করছি ৬৬৫ টাকা কেজি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মাংস বিক্রি করতে গিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে পড়ছি। এ পর্যন্ত আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। লাভের আশায় বারবার লোকসান হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। নওগাঁ পৌর মাংস বাজার সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, সরকারের নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এভাবে লোকসান করে মাংস বিক্রি করতে হবে। প্রতিদিনই আমাদের লোকসান হচ্ছে। এক সময় দেখা যাবে দোকান থাকবে কিন্তু আমরা থাকব না। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *