দৈনিক তালাশ.কমঃ নিজস্ব প্রতিবেদকঃশাক দিয়ে মাছ ঢাকতে নাকি সে বেশ পাকা। অভিযোগ রয়েছে, কর্মজীবনের শুরু থেকেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে গড়েছেন সখ্যতা। সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোড ও লালমাটিয়ায় বাড়ি ও ফ্ল্যাট (সপ্তক হক হেরিটেজ ১৬৯/১, এ্যালিফ্যান্ট রোড ফ্ল্যাট সি-৭ ও ধানমন্ডি লালমাটিয়ায় ব্লক-বি, ২/৪নং বিটি আই ফেয়ারভিউ) ও উত্তরায় রয়েছে অসংখ্য ফ্ল্যাট, ঢাকার অন্তত ৪টি আবাসন প্রকল্পে রয়েছে নামে বেনামে ১৫টিরও বেশি প্লট।
লোক মুখে শোনা যায়, নিজ স্ত্রী স্মরনী হকের নামেই এলিফ্যান্ট রোডস্থ সপ্তক হক হেরিটেজ বাড়িটির পুরো মালিকানা। ইনকাম ট্যাক্স কর্তৃপক্ষকে শুধু সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাট ক্রয়সূত্রে মালিক দেখিয়েছে আহাদউল্লাহ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা বেতনের এক প্রকৌশলী সংসার খরচ মিটিয়ে কিভাবে আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ২টি ফ্ল্যাট কিনলেন? এর উপর তার নাকি রয়েছে কালো রঙের এক বিশাল দৈত্যাকার জীপ গাড়ি।
নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্লাহর যতো স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যখন যে বিভাগে কাজ করেছেন সে বিভাগেই নাকি একটা না একটা তেলেসমতি কাণ্ড ঘটিয়েছেন এ নির্বাহী প্রকৌশলী। ঠিকাদার দিয়ে কুমিল্লার লালমাই পাহাড় কেটে মাটি বিক্রয় করার মদদ দেয়া, বসুরহাট করালিয়া সড়কের মাঝখানে গ্যাস রাইজার রেখেই রাস্তা ঢালাই দেওয়া, সাভারের সড়কে ভর দুপুরেও লাইটপোস্ট জালিয়ে রেখে বিদ্যুৎ অপচয় করা, মাসোহারার বিনিময়ে সড়কের জায়গায় ঠিকাদার কোম্পানির মালামাল রাখতে দেওয়া, মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সড়ক দখলদারদের কাছ থেকে মাসোহারা নেওয়া, সিরাজগঞ্জে কর্মে গাফিলতি করা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে সওজের প্রকল্পকে অসুস্থ প্রকল্প বলে আখ্যা দেওয়া (যা সরকারি কর্মচারী আইনের বিধিমালা পরিপন্থি), কুমিল্লার মুরাদনগরের সরকারি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে অর্ধশতাধিক দোকান ঘর নির্মাণে বাধা না দিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করা ও দোকান ভাড়ার ভাগ নেওয়াসহ কর্মক্ষেত্রে এরকম অসংখ্য দূর্নীতি, অনিয়ম ও গাফিলতি গণমাধ্যমের কাছে ধরা পড়লেও নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্লাহর সকল জায়গায় একই মুখস্থ বক্তব্য- “আমি এ মাত্র আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমি এর দ্রুত ব্যবস্থা নেবো”। একযুগেরও বেশি সময় ধরে অনিয়ম খামখেয়ালীর পর গণমাধ্যমকে এই মুখস্ত লাইনটি শুনিয়ে যাচ্ছেন সওজের বেপরোয়া প্রকৌশলী খ্যাত আহাদ উল্লাহ। সূত্র মতে, অর্থের বিনিময়ে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতেও তিনি ব্যাপক সিদ্ধহস্ত।
ধরাকে সরা জ্ঞান ছড়ানোতে বেশ পটু তিনি। কর্মজীবনে যেখানেই ছিলেন সেখানে গড়ে তুলেছেন তার খামখেয়ালিপনা, স্বেচ্ছাচারিতা ও আয়বহির্ভূত সম্পদের রাজত্ব। সওজ সূত্র জানায়, ঠিকাদারদের জিম্মি করে এবং নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে হঠাৎ আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠেছেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী।
স্বপ্ন দেখেন নিজেকে পরবর্তী সওজ প্রকৌশলী সমিতির সেক্রেটারি হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় কর্মস্থলে সময় না দিয়ে সময় দেন সড়ক ভবনে। এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশের শর্তে সওজের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আসলে সংগঠন রাজনীতির সাথে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের কোনভাবেই মাঠ পর্যায়ে পোস্টিং দেওয়া উচিত নয়। অন্যথায় কর্তব্য অবহেলা অনিয়ম ছাড়া অন্য কিছু পাবার আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। সূত্রটি আরও জানায়, সওজ প্রকৌশলী সমিতির সেক্রেটারি পদে নিজেকে অধিষ্টিত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সড়ক ভবন কেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়ে আন্দোলনের নামে সিন্ডিকেট গড়ে নানা ধরনের জটিলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মূল হোতা এই আহাদ উল্লাহ।
সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠানকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে ঢাকায় পোস্টিং নেওয়ার অভিযোগ:
সাবেক সওজ প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠানের বিশেষ আশির্বাদপুষ্ট প্রকৌশলী ছিলেন আহাদ উল্লাহ। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠানের বিরুদ্ধে দুদক চালাচ্ছে অনুসন্ধান, মনির হোসেন পাঠান ও তার স্ত্রী সন্তানের বিরুদ্ধে দুদকে চলছে মামলা। গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে।
সূত্রটি জানায়, মি. পাঠান কুমিল্লা সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থাকাবস্থাতেই মূলত কুমিল্লা সড়ক বিভাগ, ফেনী সড়ক বিভাগ ও নোয়াখালী সড়ক বিভাগে শুরু হয় আহাদ উল্লাহর স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি। পরবর্তীতে মনির হোসেন পাঠান সড়কের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নিলে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পোস্টিং পায় ঢাকা সড়ক বিভাগে। কুমিল্লা সড়ক জোনের বিভিন্ন সড়ক বিভাগে কর্মরত থাকাবস্থায় আহাদ উল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ঢাকা সড়ক বিভাগে রাতারাতি পোস্টিং পাওয়ার ব্যাপারে মনির হোসেন পাঠানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে, তাকে পোস্টিং দিতে আমি কোন আর্থিক সুবিধা নেইনি।
ব্যাপক দুর্নীতি, বেপরোয়া জীবনযাপন ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কোন কর্মস্থলেই সে তার মেয়াদের তিন বছর পূর্ণ করতে পারেনি। মেয়াদোত্তীর্ণের পূর্বেই উইথড্র হয়েছে সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী সড়ক বিভাগের প্রত্যেকটি থেকেই। এমনকি ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে প্রত্যেকটি সড়ক বিভাগের কর্মরত থাকাবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে বিরোধে জড়িয়েছে প্রকাশ্যেই। এর মধ্যে কুমিল্লা ও নোয়াখালী সড়ক বিভাগে কর্মরত অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরদের সাথে বিরোধে জড়ানোর ঘটনা আজও সড়কের বিভিন্ন মহলের মুখে মুখে। এরই মাঝে একবার নরসিংদী সড়ক বিভাগে পোস্টিং পেলেও ব্যাপক দুর্নীতি ও অভিযোগের মুখে তা আবার রাতারাতি বাতিল করা হয় বলে জানা যায়।
তবে নোয়াখালী সড়ক বিভাগের কর্মরত অবস্থায় আহাদ উল্লাহর দুর্নীতি পায় একটি ভিন্ন মাত্রা। সেখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে ঠিকাদারদের জিম্মি করে লাইসেন্স তালিকাভুক্তি ফি’র বাইরে ১০/১৫/২০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় করতেন বলে অভিযোগও রয়েছে।উজালা টেক-এর প্রোপ্রাইটর নজরুল ইসলাম তৎকালীন সময় অভিযোগ করেন, ঠিকাদারদের লাইসেন্স তালিকাভুক্তি করতে লাইসেন্স প্রতি ১০/১৫/২০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করেন তৎকালীন নোয়াখালী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমান ঢাকা বিভাগ) মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ। অন্যথায় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) আমান উল্লাহ-এর কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তখন বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে উল্টো নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষ নেন আমান উল্লাহ। আহাদ উল্লাহ ও তার সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ল্যান্ড ডেভলপমেন্টের ব্যবসার অভিযোগও খুব জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
আহাদ উল্লাহর স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালীপনার ফিরিস্তি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।সওজ সূত্রে জানা যায়, সওজে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযানে ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্লাহর নানান অনিয়ম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সওজ ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্লাহর বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কিছু বলবো না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।