নওগাঁয় ৫৫ বছর বয়সী কোহিনুরকে বাবার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল প্রকৌশলী মোয়াজ্জিম‌ হোসেন

দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁঃনওগাঁর বদলগাছী দুই বছরের কন্যা সন্তান রেখে কহিনুরের স্বামী মারা যায়। বাবা মছির উদ্দীন বিধবা মেয়েকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে আশ্রয় দেন। নানা মছির উদ্দীনের আশ্রয়ে তার বাড়িতেই সেই ছোট্র দুই বছরের শিশু কন্য নাতনী রুপালী বড় হয়। লেখা পড়া শেষ করে ধুম ধামের সহিত নানার জীবদ্দশায় নাতনীকে বিয়ে দেয়। এর কিছু দিন পর নানা-নানী অথাৎ কহিনুরের বাবা-মা মৃত্যু বরণ করে। কহিনুরকে বাবা মছির উদ্দীন বেঁচে থাকতে বার বার তার মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কহিনুর তার মেয়ের কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। কন্যা সন্তানকে বুকে নিয়ে বিধবা জীবন নিয়েই পার করে দিয়েছেন জীবনের ৫৫টি বছর। এখন সে বৃদ্ধ। তার বাবার রেখে যাওয়া একটি ঘড়ে বিধবা কহিনুর থাকতো। কিন্তু তার এই বৃদ্ধ বয়সেই নেমে এলো কহিনুরের জীবনে করুন দুঃখ দুর্দশা। তাঁকে হতে হলো বাবার বাড়ি ঘড় ছাড়া। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউপির ভগবানপুর নামক গ্রামে। জানা যায়, গত ২৬ ফেব্ররুয়ারী সোমবার। কহিনুরের বড় ভাই মোয়াজ্জিম হোসেন পিডিবির প্রকৌশলী ছিলো। চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করে তিনি এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকা থেকেই তিনি তার ছোট ভাই মহসিন হোসেনকে নির্দেশ দেয় তার ছোট বিধবা বোন কহিনুরকে যেন বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়। তার নিদের্শ মতে মহসিন তার বোন কহিনুরকে বাড়ি থেকে বাহির করে দিতে চাইলে কহিনুর বাবা দাদার বাড়ি ঘর ছেড়ে যেতে চায়নি। এমন ঘটনার এক দিন আগে ২৫ ফেব্রুয়ারী বড় ভাই মোয়াজ্জিম হোসেন বিধবা ছোট বোনকে একটি চিঠি লিখে পাঠায়। চিঠিতে তিনি লিখেন আগামী ১৪ এপ্রিলের মধ্যে ঘর ফাঁকা করে দিবি। আর তা না হলে পল্লী বিদ্যুৎ এর লোকজন দিয়ে তোর ঘরের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হবে। বাড়িতে থাকতে পারবি না। এবং তিনি আরো লিখেন বাড়ির আশে পাশে গাছপালার লতা পাতা ও গরু ছাগলকে খাওয়াতে পারবিনা। বড় ভাই মোয়াজ্জিমের এমন চিঠি বিধাব (বৃদ্ধা) এই ছোট বোন কহিনুর হাতে পেয়ে নির্বাক হয়ে যায়। অতঃপর নিরুপায় হয়ে গত সোমবার ২৬ ফেব্রুয়ারী বাপ-দাদার বাড়ি ঘর ছেড়ে দিয়ে বাড়ির পিছনে তার বাবার পরিত্যাক্ত জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণ শুরু করে বিধবা কহিনুর। এ সময় তার বড় ভাই মোয়াজ্জিম হোসেনের নির্দেশে ছোট ভাই মহসিন তঁকে ঘর করতে বাঁধা প্রদান করে সেখান থেকেও তাড়িয়ে দেয়। অবশেষে বিধবা, বৃদ্ধা কহিনুর কোন উপায় অন্তর খুঁজে না পেয়ে গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রæয়ারী) কহিনুর বাদী হয়ে বড় ভাই প্রকৌশলী মোয়াজ্জিম হোসেন ও ছোট ভাই মহসিন হোসেনকে বিবাদী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দিন বিকেলে বদলগাছী থানার এ,এস,আই আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেলে ও তাৎক্ষনিকভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে এ,এস,আই আজিজুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি বিধবা কহিনুরকে শান্তনা দিয়ে এসছি। বিষয়টি নিয়ে খুব তারাতাড়ি দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। ভুক্তভোগী বিধবা কহিনুর জানান, তিনি বিধবা হওয়ার পর তার বাবা তাঁকে তার দুই বছরের শিশু কন্যাকে সহ বাড়িতে নিয়ে এসে আশ্রয় দেন। সেই থেকে বাবার জীবদ্দশায় বেশ ভালই ছিলাম। বাবা-মার মৃত্যুর পর থেকে ভাই দের সংসারে কাজের মেয়ের মত জীবন জাপন করেছি। এই বৃদ্ধ বয়সে সেই ভাইয়েরা আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো। বাবার বাড়ির পিছনে টিনের চালা দিয়ে ঘর তৈরী করে জীবন যাপন করতে চাচ্ছি, সেখানেও ভাইদের বাঁধা। পারচ্ছিনা ঘর তৈরী করতে। এখন আমি এই বৃদ্ধ বয়সে বিধবা জীবন নিয়ে কোথায় থাকবো, কি খাবো, কি পরবো, কোথায় যাবো বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। কিছুক্ষন পর কহিনুর কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, বাবার সম্পত্তিতে আমারও অধিকার রয়েছে। তবুও দুই ভাই আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে এর ন্যায় বিচার চাই। বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, এবিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *