দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকারঃআজ ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বহু কালজয়ী গানের গীতিকার মাসুদ করিম এর জন্মবার্ষিকী।
সজনী গো ভালোবেসে এত জ্বালা’, ‘শত্রু তুমি বন্ধু তুমি’, ‘তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছ মানুষ কিনা’, ‘কিছু বলো, কিছু বলো’, ‘তন্দ্রা হারা নয়নও আমার’, ‘যখন থামবে কোলাহল’।এছাড়া, ‘শিল্পী আমি তোমাদের গান শোনাব’ এসব হৃদয়ছোঁয়া গানের স্রষ্টা গীতিকার মাসুদ করিম। অমর অনেক সংগীতের এই স্রষ্টা বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম।
মাসুদ করিম একজন খ্যাতিমান গীতিকার। দেশ বিদেশের অনেক খ্যাতিমান সুরকারেরা তার রচিত গানে সুর দিয়েছেন এবং বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীরা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়া মাসুদ করিম সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য দুইবার শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
মাসুদ করিম ১৯৩৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর কাজীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেজাউল করিম একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা নাহার ছিলেন গৃহিনী।মাসুদ করিম ঢাকা ও চট্টগ্রাম বেতারে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কয়েক বছর পরে তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দান করেন।
১৯৬০ সাল থেকে মাসুদ করিম বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের জন্য গীত রচনা শুরু করেন। তবে ষাট, সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্রের গান রচনা করে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৮২ সালে ‘রজনীগন্ধা’ এবং ১৯৯৪ সালে ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবির গানের জন্য গীতিকার মাসুদ করিম শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুইবার।
গীতিকার মাসুদ করিম চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক এর জন্য একজন স্বনামধন্য গীতিকারই শুধু নন, তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। তার প্রযোজিত ছবিগুলো- ‘অচেনা অতিথি’, ‘ওয়াদা’, এবং ‘ভালো মানুষ’।মাসুদ করিম গান লিখতে শুরু করেন ১৯৫৫ সাল থেকে। তাঁর গানের সংখ্যা অনেক। তার মধ্যে কিছু প্রিয় গান গুণী শিল্পীরা গেয়েছেন। বশীর আহমেদের কণ্ঠে-‘সজনী গো ভালোবেসে এত জ্বালা’, আব্দুল জব্বারের কন্ঠে-‘শত্রু তুমি বন্ধু তুমি’।
তাছাড়া খুরশিদ আলমের কন্ঠে- ‘তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছ মানুষ কিনা’, সৈয়দ আব্দুল হাদীর কন্ঠে- ‘কিছু বলো, কিছু বলো’, মুহাম্মদ আলি সিদ্দিকীর কন্ঠে-‘বাঁশি বাজে ওই দূরে।এছাড়া হাসিনা মমতাজের কন্ঠে-‘তন্দ্রা হারা নয়নও আমার, ফেরদৌসী রহমানের কন্ঠে- ‘দুটি চোখে চোখ রেখে’। রুনা লায়লার কন্ঠে- ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘শিল্পী আমি তোমাদের গান শোনাব’।
রুনা লায়লার কন্ঠে তার লিখা “‘যখন আমি থাকবো নাকো’ ‘আমি সুজন দেখে ভাব করেছি’, শাহনাজ রহমতুল্লার কন্ঠে-‘ওই আকাশ ঘিরে সন্ধা নামে’, মাহমুদুন্নবীর কন্ঠে-‘সঙ্গীতা যদি ডাকি’,‘বাতাসে তোমার সংলাপ শুনি’।এছাড়া আরও আছে, ‘তোমরা যারা আজ আমাদের’, সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে-‘আমি রজনী গন্ধ ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘সন্ধারও ছায়া নামে’, ‘সামিনা নবীর কন্ঠে- ‘বেইমান বাঁশি।
মাসুদ করিম এর লিখা দিলারা আলোর কন্ঠে- ‘জোনাক জোনাক রাত, আনোয়ার উদ্দিনের কন্ঠে-‘যদি নীল সাগরের মুক্ত তুমি চাও।এছাড়া মাকসুদের কন্ঠে- ‘ঘর ছেড়েছি দুজনে, শুভ্র দেবের গাওয়া ‘ যে বাঁশি ভেঙে গেছে’ এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার মাসুদ করিম।
প্রখ্যাত গজলসম্রাট মেহেদি হাসান, ভারতের শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা, ঊষা উত্থুপ, কুমার শানু, অনুরাধা পাড়োয়াল, উদিত নারায়ণও তাঁর লেখা গান করেছেন।
এসব গানগুলো বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গীতিকার মাসুদ করিম যাঁর শত শত গান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে লাখো-লাখো ভক্ত-শ্রোতাদের আজও মনও ছুঁয়ে যায়।মাসুদ করিম ১৯৬৫ সালে দিলারা আলোর সাথে চট্টগ্রাম বেতারে পরিচয় ও সেই সূত্র ধরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী দিলারা আলো একজন সঙ্গীত শিল্পী।
ষাট ও সত্তরের দশকে দিলারা আলো বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।মাসুদ করিম ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।