দৈনিক তালাশ.কমঃ উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁঃ কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় উপমহাদেশে বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী। ওস্তাদ গোলাম আলি খানের কাছে প্রশিক্ষিত এ ধ্রুপদী শিল্পী গত শতকের পাঁচের দশক থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে আরম্ভ করে বাংলা আধুনিক ও সিনেমার প্লেব্যাক গান, এমন কি নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে মোহিত করে রেখেছেন উপমহাদেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের।
হয়তো কিছুই নাহি পাবো, তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাবো।’গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়,
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় উপমহাদেশের বাংলা গানের কিংবদন্তী শিল্পী। ওস্তাদ গোলাম আলি খানের কাছে প্রশিক্ষিত এ ধ্রুপদী শিল্পী গত শতকের পাঁচের দশক থেকে শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে আরম্ভ করে বাংলা আধুনিক ও সিনেমার প্লেব্যাক গান, এমন কি নজরুল সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে মোহিত করে রেখেছেন উপমহাদেশের সংগীত প্রিয় প্রেমীদের। নামটিই যেন শ্রোতাদের মনে ছড়িয়ে দেয় স্মৃতিমধুরতায় কুয়াশা। বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
আজীবন লো-প্রোফাইল রক্ষা করা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩১ সনের ৪ অক্টোবর কলকাতার ঢাকুরিয়ায়।
১৯৪৪ সালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সংগীত জগতে আসেন। প্রথম রেকর্ডকৃত গান ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ এবং ‘তোমার আকাশে ঝিলিমিলি কঙ্গি মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে তিনি রেডিওতে গান ‘যদি বা ফুরালো গান’ সিনেমায় প্রথম গান করেন ১৯৪৮ সালে ‘অঞ্জন গড়’ ছবিতে। সেই রাই চাঁদ বড়ালের যুগ থেকে এ যুগের সুমনের সুরে গানও করেছেন। অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়ের মতো মিউজিক ডিরেক্টরের সঙ্গে গান করেছেন। মুম্বাইতে শচীন দেব বর্মণই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে ডেকে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অনিল বিশ্বাসের সুরে লতার সঙ্গে গান করেছিলেন। সেই সূত্রে লতার সঙ্গে সখ্যতা হয়। গীতা দত্তের সঙ্গেও বন্ধুত্ব ছিল।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বলা হয় বাংলা গানের এক পুরো অধ্যায়। বাংলা সিনেমার প্রথম ‘প্রিমা ডোনা’ কানন দেবীর হাত থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন এই সন্ধ্যা। পরবর্তী চার দশকে (১৯৪৮ থেকে ১৯৮৮) সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা ছবির প্লেব্যাক সম্রাজ্ঞীর আসনে। পাশাপাশি আধুনিক বাংলা গানে ৬০ বছর ধরে সোনালি ফসল তুলে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন তিনি। তিনি যা অর্জন করেছেন তা মহীরুহের মতোই।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মানেই হেমন্ত-সন্ধ্যা, অনুপম-সন্ধ্যা, রবীন-সন্ধ্যা, মানবেন্দ্র-সন্ধ্যা, মান্না-সন্ধ্যা, শ্যামল গুপ্ত-সন্ধ্যা, সুচিত্রা-সন্ধ্যা—এমন বহু উজ্জ্বল অধ্যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত প্রেমিকদের অহঙ্কারী হওয়ার রসদ জোগায়। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সংগীতের এক জীবন্ত কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (এছাড়াও সন্ধ্যা মুখার্জী (৪ অক্টোবর ১৯৩১- ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২) একজন ভারতীয় নেপথ্য গায়িকা এবং সংগীতশিল্পী, বাংলা সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ। কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী, তিনি ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণ পান এবং ১৯৭০ সালে জয় জয়ন্তী এবং নিশিপদ্ম চলচ্চিত্রে তার গানের জন্য সেরা নেপথ্য গায়িকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
কিছুক্ষণ নাহয় রহিতে কাছে
আরও কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে
উপরোক্ত কালজয়ী গানের কণ্ঠশিল্পী প্রবাদপ্রতিম কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ।
ভারতীয় বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় অসংখ্য কালজয়ী গানে কন্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে আজও সম্রাজ্ঞী হয়ে আছেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উদ্বাস্তুদের বিভিন্ন সাহায্য সহয়তার জন্য অসংখ্য অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে অর্থ সংগ্রহে যোগ দিয়েছিলেন বাংলা গানের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
আর বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি উপলক্ষে তিনি উদাত্ত কণ্ঠে গেয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’ গানটি।
এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় পল্টন ময়দানে একটি উন্মুক্ত কনসার্টে গাইতে এসেছিলেন এই প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কলকাতার ঢাকুরিয়াতে ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে রেলের কর্মকর্তা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং হেমপ্রভা দেবীর ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন।
পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, অধ্যাপক এ টি ক্যানন এবং অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ীর নিকট তিনি সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন। তবে তার গুরু ছিলেন উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান , তার পুত্র উস্তাদ মুনাওয়ার আলী খান।
যার অধীনে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আয়ত্ত করেছিলেন।তিনি ১৯৪৬ সালে “গীতশ্রী” পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। মনোরমা শর্মা বলেন, ” নেপথ্য গানের উজ্জ্বল গৌরব অর্জনের পরেও একজন শাস্ত্রীয় গায়ক হিসাবে সন্ধ্যা, তার জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
যদিও তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত, তবুও তার বেশিরভাগ কাজ বাংলা আধুনিক গানে। ১৯৫০ সালে তারানা চলচ্চিত্রে একটি গান দিয়ে তিনি মুম্বাইতে হিন্দি গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়ে দর্শক ও বোদ্ধা মহলে সমাদৃত হয়েছেন।
ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি তার কলকাতা শহরের বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাঙালী কবি শ্যামল গুপ্তকে বিয়ে করেন। শ্যামল গুপ্ত তার অনেক গানের জন্য কথা লিখে দিয়েছিলেন।
তার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি ছিল হেমন্ত মুখার্জীর সাথে, যার সাথে প্রাথমিকভাবে বাঙালি চলচ্চিত্রগুলির জন্য নেপথ্য গায়িকা হিসাবে তিনি বেশ কয়েকটি কালজয়ী গান গেয়েছিলেন।
হেমন্ত ও সন্ধ্যা বাংলার মহানায়ক উত্তম কুমার এবং তার অসংখ্য নায়িকা জোড়াগুলির নেপথ্য কণ্ঠস্বর হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, বিশেষত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে।
হেমন্ত মুখার্জির রচনা ছাড়াও রবিন চট্টোপাধ্যায় ও নচি
নওগাঁ।