টেকনাফ থানাধীন হাতিয়ারঘোনা এলাকা থেকে পাচার চক্রের দুইজন র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার

দৈনিক তালাশ.কমঃ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে অবৈধভাবে চোরাইপথে পার্শ্ববর্তী দেশে ভোগ্যপণ্য পাচারকালে কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন হাতিয়ারঘোনা এলাকা থেকে পাচার চক্রের দুইজন র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার; ৪,৪৭০ লিটার ভোজ্য তেল সয়াবিন, বিভিন্ন প্রকারের ১,৩৬,৫৫০ পিস ঔষধ ও ৫০০ কেজি ময়দা উদ্ধার

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশে বিবিধ অপরাধ নির্মূলে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছে। ‘‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’’ এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, জঙ্গী দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, জলদস্যু, ডাকাত, চুরি-ছিনতাই, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদকসহ দেশে বিরাজমান নানাবিধ অপরাধ দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

২। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার জেলার সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও পাচারকারী ভোজ্য তেল সয়াবিন’সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, জ্বালানী তৈল ও ডিজেল অবৈধভাবে চোরাচাইপথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করছে। এতে করে একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সাথে দেশীয় উপরোল্লিখিত খাদ্যদ্রব্য, অকটেন, ডিজেল ইত্যাদি দেশ হতে অন্য দেশে পাচার হওয়ার কারণে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাচারের বিষয়টি র‌্যাব-১৫ এর নজরে আসায় এই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার এবং পাচার রোধে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়।

৩। আপনারা জানেন, গত জানুয়ারি ২০২৪ মাসে অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী দেশে পাচার রোধে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে সর্বমোট ০৯ জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। একই সাথে তাদের হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয় সর্বমোট ৫,৩৮৫ লিটার অকটেন, ৪০ কেজি পেঁয়াজ, ৩১ কেজি রসুন, ৩৬ কেজি আদা উদ্ধার এবং পরিবহন কাজে ব্যবহৃত ০২টি পিকআপ, নগদ ১৮,১০০/- (আঠার হাজার একশত টাকা), ০৩টি বাটন ও ০৪টি স্মার্ট ফোন জব্দ করা হয়।

৪। এ ধরণের গর্হিত অপরাধ রোধকল্পে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে অন্য দেশে পাচারের উদ্দেশ্যে কতিপয় পাচারকারী ভোজ্য তেল সয়াবিন’সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকায় জনৈক আবুল বাশার হাজির মুরগির খামার সংলগ্ন ভিটা এলাকায় অবস্থান করছে। বর্ণিত সংবাদের ভিত্তিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ অনুমান ০৫.২০ ঘটিকার সময় র‌্যাব-১৫, সিপিসি-১, টেকনাফ ক্যাম্পের চৌকস আভিযানিক দল উক্ত এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র‌্যাবের আভিযানিক দলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কৌশলে পলায়নের চেষ্টাকালে দুইজন পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত পাচারকারীদ্বয় তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ভোজ্য তেল সয়াবিন, ঔষধ এবং ময়দা মজুদ রাখে মর্মে স্বীকার করে। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে ০১টি জীপ গাড়িসহ সর্বমোট ৮৯৫টি বোতলে ৪,৪৭০ (চার হাজার চারশত সত্তর লিটার) লিটার ভোজ্য তেল সয়াবিন, বিভিন্ন প্রকারের ১,৩৬,৫৫০ (এক লক্ষ ছত্রিশ হাজার পাঁচশত পঞ্চাশ) পিস ঔষধ ও ১০টি বস্তায় মোট ৫০০ (পাঁচশত) কেজি ময়দা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১১,৮০,০০০/- (এগার লক্ষ আশি হাজার টাকা)।

৫। গ্রেফতারকৃত পাচারকারীদ্বয়ের বিস্তারিত পরিচয় :

১) আবদুল মান্নান (২৪), পিতা-আবুল বশর, মাতা-পারভীন আক্তার, সাং-হাতিয়ার ঘোনা, ২নং ওয়ার্ড, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন, থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার।
২) আলী হোসেন (৪৫), পিতা-মৃত হাছন আলী, মাতা-সায়েরা খাতুন, সাং-হাতিয়ার ঘোনা, ২নং ওয়ার্ড, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন, থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার।

৬। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এই চোরাচালানের সাথে জড়িত। তারা পরস্পর-পরস্পরের সহযোগীতায় দেশের বিভিন্ন কোম্পানী থেকে পাইকারি দামে ভোজ্য তৈল, ঔষধ, ময়দা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে নিজেদের হেফাজতে মজুদ করতো। পরবর্তীতে আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে অবৈধভাবে চোরাইপথে এ দেশ হতে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।

৭। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশে যুদ্ধাবস্থার কারণে দেশটিতে তৈল, ঔষধ এবং খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক ঘাটতি এবং দ্রব্যমূল্যের প্রচন্ড উর্ধ্বগতি দেখা দেয়। এই উদ্ভুত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তৈলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বাংলাদেশ থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে উচ্চ দামে কক্সবাজার জেলার সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে আসছিল। বিনিময়ে নগদ টাকার পাশাপাশি তারা ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে নিয়ে আসতো বলে জানায়।

৮। গ্রেফতারকৃত চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *