দৈনিক তালাশ.কমঃউজ্জ্বল কুমার সরকারঃউপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর এই দিনে ব্রিটিশ ভারতের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। ২৫ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম ওঠান এ গায়িকা।
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক ছিল কিংবদন্তী এ কণ্ঠশিল্পীর। পরিবারের উৎসাহে গানের চর্চাও শুরু করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে পেশাগত শিল্পী হিসেবে পরিচিত পান তিনি। ১৯৫০ সাল থেকে মিষ্টি কণ্ঠের জাদুতে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে আসছেন লতা।
এক হাজারেরও বেশি হিন্দি সিনেমায় গান গেয়েছেন তিনি। হিন্দিসহ বিশ্বের মোট ২৬টি ভাষায় এখন পর্যন্ত গান গেয়েছেন জিবন্ত কিংবদন্তি এ গায়িকা। এছাড়া ভারতের ২০টি আঞ্চলিক ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তাঁরই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার জন্য ভারতীয় শিল্পীরা সতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংক্যাম্প থেকে শরনার্থী শিবির গুলোতে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে উজ্জীবিত করেছেন মুক্তিযোদ্ধা শরনার্থী সবাইকে।
এইসব কার্যক্রমে সে সময় লতা মঙ্গেশকর ছাড়াও আশা ভোসলে, কিশোর কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মোহাম্মদ রফি, মান্না দে, সলিল চৌধুরী প্রমুখ বাংলাদেশের শরনার্থীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রয়োজনে ফান্ড গঠনের জন্য সংগীত পরিবেশন করেন।
লতা মঙ্গেশকর পরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি সংগীত পরিবেশন করেছেন। আমাদের চলচ্চিত্রে গানও গেয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে মমতাজ আলী ‘রক্তাক্ত বাংলা’ নামে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন সেখানে প্লেব্যাক করেছেন লতাজ্বী।
১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ২৫ হাজার গানের রেকর্ড করে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গান গেয়ে লতার নাম ওঠে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় হিন্দি গানের মধ্যে রয়েছে ‘পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া’, ‘আজিব দাসতা হে ইয়ে, ‘কাহি দিল জালে কাহি দ্বীপ, ‘আজারে পারদেশী’, ‘আপকি নজরোসে সামঝা’, ‘লাগজা গালে’, ‘ন্যায়না বারসে রিমঝিম’, ‘তুঝে দেখাতো ইয়ে জানা সনম’, গেয়েছেন।
এছাড়া আরো গেয়েছেন ‘মেরে জীবন সাথি’, ‘শিশা হো ইয়া দিল হো’, ‘নদীয়া কিনারে’, ‘আভি তো ম্যায় জাওয়ান হু’, ‘ধীরে সে আজা রে’, ‘রাত ভি কুচ হ্যায়’, ‘হামকো হামিসে চুরালো’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’সহ আরও অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
অন্যদিকে বাংলা গানের মধ্যে রয়েছে ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’, ‘ওই গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি’, ‘।
আরও আছে, যদিও রজনী পোহালো’, ‘হায়হায় প্রাণ যায়’, ‘চলে যেতে যেতে দিন’, ‘সাত ভাই চম্পা জাগরে’, ‘আকাশ প্রদীপ জ্বেলে’, ‘না যেও না’, ‘যারে যারে উড়ে যা পাখি’, ‘কি লিখি তোমায়’ ইত্যাদি।
সংগীতে বিশেষ অবদান রাখায় পুরস্কারের ঝুলিটাও তাই বেশ ভারী কিংবদন্তী এ গায়িকার। ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ফিল্মফেয়ারে ১৯৯৪ সালে ‘আজীবন সম্মননা পুরস্কার’ লাভ করেন তিনি।
১৯৯৭ সালে পান ‘মহারাষ্ট্রভূষণ’ পুরস্কার। ১৯৯৯-তে জেতেন ‘এনটিআর জাতীয় পুরস্কার’। একই বছর ভারত সরকার তাকে দেন ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরস্কার।
১৯৮৯ সালে পান ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’। এমনকি ২০০১ সালে ভারত সরকারের সবচেয়ে সম্মানিত পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ও লাভ করেন এ কিংবদন্তী।